বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইয়াসমিন ট্র্যাজেডির ২৭ বছর পরও থামেনি ধর্ষণ-হত্যা

  •    
  • ২৪ আগস্ট, ২০২২ ১০:১৬

ট্র্যাজেডির ২৭ বছর পরও দিনাজপুরে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা এখনও কমেনি বলে দাবি করেছেন ইয়াসমিনকে নিয়ে আন্দোলনরত বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ। জানা গেছে, দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি মামলা এখন জট বেঁধে আছে। গত ৮ মাসেই এই আদালতে নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলা হয়েছে ৮৭১টি।

২৪ আগস্ট। ১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরে কয়েকজন বিপথগামী পুলিশ সদস্যের হাতে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছিলেন কিশোরী ইয়াসমিন। এ ঘটনায় পরে দোষীদের বিচার দাবিতে ফুঁসে ওঠে দিনাজপুরের সর্বস্তরের মানুষ। দিনটিকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবেই পালন করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন।

কিন্তু ট্র্যাজেডির ২৭ বছর পরও দিনাজপুরে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা এখনও কমেনি বলে দাবি করেছেন ইয়াসমিনকে নিয়ে আন্দোলনরত বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ।

তারা জানান, ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার দশমাইলের কাছেই কিছু বিপথগামী পুলিশ সদস্যের হাতে ধর্ষিত হন ১৮ বছর বয়সী ইয়াসমিন। পরে তাকে হত্যা করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। শুধু তা-ই নয়, পরদিন ইয়াসমিনের মরদেহটি উদ্ধারের পর এটিকে পতিতার মরদেহ বলে প্রচার করতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা।

কিন্তু পুলিশের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে দিনাজপুরের সাধারণ মানুষ। শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। একপর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়ে সামু, কাদের, সিরাজসহ ৭ জনকে হত্যা করে। আহত হন আরও ৩ শতাধিক।

ইয়াসমিনকে ধর্ষণ ও হত্যা করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করেন পুলিশ সদস্যরা। শুধু তা-ই নয়, পরদিন কিশোরী ইয়াসমিনের মরদেহ উদ্ধারের পর এটিকে পতিতার মরদেহ বলে প্রচার করতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। ফাইল ছবি

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে তৎকালীন বিডিআর বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া দিনাজপুর থেকে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ১৩ উপজেলার সব পুলিশকে একযোগে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

৩টি আদালতে ১২৩ দিন বিচারকাজ শেষে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ। রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পুলিশের এএসআই মঈনুল, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও পুলিশের পিকআপ ভ্যানচালক অমৃত লাল বর্মণকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। রংপুর কারাগারে এই দণ্ড পরে কার্যকর করা হয়।

১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার দশমাইলের কাছেই কিছু বিপথগামী পুলিশ সদস্যের হাতে ধর্ষিত হন ১৮ বছর বয়সী ইয়াসমিন। ফাইল ছবি

দিবসের আনুষ্ঠানিকতা

ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে দিনাজপুর শহরের দশমাইল মোড়ে ইয়াসমিনের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।

ইয়াসমিনের কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিলও অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ইয়াসমিনের মা শরীফা বেগম নিজ বাড়িতে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের আয়োজন করেছেন।

এখনও থামেনি নিপীড়ন

ইয়াসমিন ট্র্যাজেডির ২৭ বছর পরও দিনাজপুরে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারীরা। গত রোববার রাতেও জেলার খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নে পুত্রবধূকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ ওঠে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ধর্ষণচেষ্টার সময় শ্বশুরের লিঙ্গ কেটে দেয়ার খবরটি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ওই গৃহবধূ জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই শ্বশুর তাকে যৌন হয়রানিসহ কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন।

এর আগে গত ৬ আগস্ট রাতেও বিরল উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির নির্যাতনের শিকার হন এক গৃহবধূ। তারা ওই গৃহবধূকে পাশবিক নির্যাতন করে মাথাও ন্যাড়া করে দেন। এ ঘটনায় স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে পরে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

কিন্তু ধীর বিচার প্রক্রিয়া আর সঠিক বিচার না হওয়া এ ধরনের ঘটনাকে উসকে দিচ্ছে বলে মনে করেন ইয়াসমিনকে নিয়ে আন্দোলনকারীরা।

ইয়াসমিন আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে দিনাজপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল অন্যতম।

আন্দোলনে তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান স্মরণ করে সংসদ সদস্য বলেন, ‘বর্তমান সরকার ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করলেও এসব কমছে না।’

নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা প্রতিরোধে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান মনোরঞ্জন শীল। একই সঙ্গে নারী নির্যাতনের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন তিনি।

জানা গেছে, দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি মামলা এখন জট বেঁধে আছে। গত ৮ মাসেই এই আদালতে নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলা হয়েছে ৮৭১টি।

সাক্ষীরা যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ায় এসব মামলা দীর্ঘ সময় ধরে চলে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তৈয়বা বেগম।

দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আদালতে মামলা হয়েছে ১ হাজার ২৭৬টি। সেই হিসেবে গড়ে প্রতি মাসে ১০৬টি মামলা।

কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত এই আদালতে মামলা হয়েছে ৮৭১টি। এই হিসাবে গড়ে প্রতি মাসে ১০৮টি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর এখন পর্যন্ত মাসে গড়ে ২টির বেশি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।

এই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তৈয়বা বেগম বলেন, ‘সাক্ষীদের সঠিক সময়ে উপস্থিত করা গেলে মামলার সংখ্যা অনেকটাই কমে আসবে।’

এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ‘পল্লী শ্রী’ জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মাত্র ৬ মাসেই সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৭৬৯ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৭২ জন নারীকে। এসব ঘটনায় আত্মহত্যা করেছেন ৬ নারী।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে আইনের সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করেন ‘পল্লী শ্রী’ এর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরা বেগম।

এ বিভাগের আরো খবর