নারীরা পুরুষদের তুলনায় গড়ে চার বছর বেশি বাঁচেন। তবে জীবনের অনেকটা সময় তারা অসুস্থতায় বেশি ভোগেন।
ডেইলি মিররের প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে চিহ্নিত মরণব্যাধি হৃদরোগ, স্ট্রোকজনিত সমস্যায় চিকিৎসার জন্যও তারাই বেশি আসেন।
অনেকে রসিকতা করে বলেন, মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় বেশি ব্যথায় ভোগেন। তাছাড়া এটাও প্রমাণিত যে, মেয়েদের ব্যথাজনিত অসুস্থতাকে কম গুরুত্ব দেয়া হয়।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যসেবায় এই লিঙ্গ বৈষম্যকে বন্ধ করার লক্ষ্য হিসেবে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। এই জরিপে দেখা যায়, নারীরা তাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে বেশি সচেতন। তবে অসুস্থতার কারণ হিসেবে হরমোনের কিছু ব্যাপার রয়েছে। যা একজন নারীর স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট ফর উইমেন হেলথের একজন অধ্যাপক এবং প্রজনন বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ডা. হেলেন ও'নিল বলেছেন, 'আমরা ছোটবেলা থেকে মেয়েদের শেখাই, ব্যথা তাদের জন্য খুব স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এটা শেখাই না, পিরিয়ড চলাকালীন ব্যথা আর অসুস্থতাজনিত ব্যথা একদম আলাদা।'
মূলত নারীদের পিরিয়ড, গর্ভকালীন জটিলতার কারণে তারা নানা অসুস্থতায় ভোগেন। কারণ এই সময়গুলোতে তাদের শরীরে হরমোনের বহুমুখী পরিবর্তন ঘটে।
ও'নিল বলেন, নারীদের গর্ভপাত বা মেনোপজের কারণে সৃষ্টি হওয়া সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। যেখানে এ বিষয়ে একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ২৬টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মাত্র ২৬ জন নারী ছিলেন।
আরও পড়ুন: মেনোপজের কারণে চাকরি ছাড়ছেন ব্রিটিশ নারীরা
ও'নিলের একটি গবেষণা আরও বলছে, নারীদের মৃত্যুর তিনটি শীর্ষ কারণ হলো কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (সিভিডি), অস্টিওপরোসিস এবং ডিমেনশিয়া। যার সবগুলোই হরমোন দিয়ে প্রভাবিত। ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত নারীদের মৃত্যুর সম্ভাবনা দুই-তৃতীয়াংশ বেশি।
তবে আমরা অনেকেই জানি না ডিমেনশিয়া কী? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ডিমেনশিয়া হলো, মস্তিস্কের অনেক অসুখের একটি উপসর্গ। এর সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া বা ভুলে যাওয়া। কেউ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হলে তার পক্ষে অতীতের চেয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা মনে রাখা অনেক বেশি কঠিন।
যে রোগগুলোতে নারীরা বেশি ভোগেন :
হৃদরোগ
সাধারণত নারীরা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা প্রিক্ল্যাম্পসিয়ায় ভোগেন। এতে তাদের করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ অতিরিক্ত ওজন। গর্ভধারণের আগে মায়ের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আছে এমন অর্ধেক সংখ্যক নারীরাই পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে পড়েন। সে ক্ষেত্রে ওজন কমাতে হবে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস থেকে বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ শস্য এবং কম ফ্যাটযুক্ত খাবার খেতে হবে।
স্ট্রোক
আমেরিকার ব্রিগহাম অ্যান্ড উইমেনস হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ক্যাথরিন রেক্সরোডের গবেষণায় দেখা যায়, যদি কোনো নারী অকালে প্রসব করেন, অর্থাৎ সময়ের আগে সন্তান পৃথিবীতে আসে তখন এই ঝুঁকি বাড়ে। যাদের পিরিয়ড খুব কম বয়সে বা দেরিতে শুরু হয়। আবার যাদের ৩০ বছর বয়সের আগেই পিরিয়ড শেষ হয়ে যায় তাদেরও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। আর সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে এই ঝুঁকি কমে যায়।
নিয়মিত আপনার রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে। খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে কম চর্বিযুক্ত ও উচ্চ ফাইবার খাবার খেয়ে নিজেকে সুরক্ষা করতে হবে।