সাতক্ষীরার কৈখালী ইউনিয়নে যেদিকে চোখ যায় শুধু লোনা পানি। পিরিয়ডের সময় এখানকার মেয়েরা এই লোনা-নোংরা পানিই ব্যবহার করতেন।
লোনা পানি ব্যবহার করলে জরায়ুর বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হন নারীরা। তাই ঝামেলা এড়াতে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখছিল স্থানীয় কিশোরীরা।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা। আর সেই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কৈখালীর কিশোরীদের পাশে দাঁড়িয়েছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্র্যান্ড সেনোরা। ‘মেয়ে, তোমার স্বস্তির জন্য’ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে তারা।
কৈখালীতে বৃষ্টি হয় প্রচুর, তাই এই ক্যাম্পেইনে সেনোরা বৃষ্টির পানি সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। ইউনিয়নের ছয়টি পয়েন্টে বসানো হয়েছে ১২টি পানির ট্যাংক, যাতে মেয়েরা পিরিয়ডসহ অন্যান্য প্রয়োজনে নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে পারেন।
সেনোরার উদ্যোগে কৈখালী ইউনিয়নে কিশোরীদের নিয়ে কয়েকটি উঠান বৈঠকও করা হয়েছে, দেয়া হয়েছে তিন মাসের ফ্রি স্যানিটারি ন্যাপকিন। এ ছাড়া যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যাবে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ০৮০০০৮৮৮০০ টোল ফ্রি নম্বরে।
উঠান বৈঠকে এলাকার নারীদের সচেতন করা হচ্ছে। স্যানিটারি প্যাড বিতরণের কার্যক্রম চালাতে দুজন নারী প্রতিনিধিও ঠিক করে দিয়েছে সেনোরা। স্থানীয়ভাবে তারা ‘নোরা আপা’ হিসেবে পরিচিত।
নোরা আপাদের একজন ফারজানা পারভীন স্থানীয় একটি কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে মেয়েদের জন্য এমন ব্যবস্থার কথা ভাবাই যায় না। ট্যাংকে জমা হওয়া বৃষ্টির পানি আমাদের খুবই উপকারে আসছে। স্যানিটারি প্যাড পেয়ে গত দুই মাসে পিরিয়ডকালে মেয়েদের কাপড় ব্যবহার করা কমেছে।
‘সবচেয়ে বড় ব্যাপার মেয়েদের পিল খাওয়াও বন্ধ হয়েছে।’
আরেক ‘নোরা আপা’ গৃহবধূ খাদিজা খাতুন বলেন, ‘এক উঠান বৈঠকের পরে জুলাই মাসের প্যাড সেনোরার পক্ষ থেকে বিতরণ করা হয়। এক মাস না যেতেই আগস্ট মাসের প্যাড ওরা আমার কাছে পৌঁছে দিয়েছে। এই মাসে আমি প্রায় ১০০টি প্যাড বিতরণ করেছি। এখানকার মেয়েরা প্যাড পেয়ে খুব খুশি। তবে অনেকেই চিন্তিত তিন মাস পর কী হবে সেটা নিয়ে।’
এ বিষয়ে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের হেড অফ মিডিয়া অ্যান্ড রিসার্চ এডওয়ার্ড প্রকাশ বালা বলেন, ‘আমরা এই উদ্যোগকে চালিয়ে নিয়ে যেতে চাই। কীভাবে পুরো ব্যাপারটি টেকসই করা যায়, সেটি নিয়েই আলোচনা চলছে। চাইলে অন্যরাও আমাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন।’
মুখে একরাশ হাসি নিয়ে কৈখালীর দশম শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘পিল এখন আর খাচ্ছি না। মাসিকের সময় ভালো পানি পাচ্ছি, প্যাড পাচ্ছি।’
ট্যাংক থেকে পানি নিয়ে বাসায় ফেরার পথে এক কিশোরী বলে, ‘যারা আমাদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে তাদের ধন্যবাদ। আগে আমরা পুরোনো কাপড় ব্যবহার করতাম, এখন প্যাড পাচ্ছি। পিলও খাচ্ছি না।’
তৃপ্তি রানী নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানকার মেয়েদের জীবন ভীষণ কষ্টের। লোনা ও ভীষণ নোংরা পানিতে আমাদের দৈনন্দিন, বিশেষ করে মাসের বিশেষ দিনগুলোর কাজ সারতে হতো। সেই বিপদ থেকে আমাদের রক্ষা করেছে সেনোরা। এই পানির ট্যাংক পেয়ে আমাদের ভীষণ উপকার হলো।’
সেনোরার উদ্যোগ সম্পর্কে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ডিরেক্টর ও অপারেশন বিভাগের প্রধান মালিক মো. সাঈদ বলেন, ‘সেনোরার জন্মলগ্ন থেকেই আমরা মেয়েদের নিরাপদ পিরিয়ড নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় কৈখালীর মেয়েদের সমস্যাতেও পাশে দাঁড়িয়েছি।’
স্কয়ার টয়লেট্রিজের মার্কেটিং বিভাগের প্রধান ড. জেসমিন জামান বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগ শুধু এখানেই থেমে থাকবে না। আমরা কৈখালী গ্রামে কিছু মেয়েকে প্রশিক্ষিত করেছি, যারা স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন প্রয়োজনে কিশোরীদের পাশে থাকবেন।’
সেনোরার এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিল বিজ্ঞাপনী এজেন্সি সান কমিউনিকেশনস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠিানের কপি সুপারভাইজার রিয়াজুল আলম শাওন বলেন, ‘ট্যাংক বসানো, উঠান বৈঠক, ফ্রি স্যাম্পলিং, ভিডিওচিত্র নির্মাণ সব ক্ষেত্রেই আমাদের আন্তরিকতা আর ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। আমাদের কাজ এখানেই শেষ নয়, ভবিষ্যতেও আমরা সব সময় কৈখালীর মেয়েদের পাশে থাকব।’