আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস সামনে রেখে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংবিধানিক পরিচয় ‘আদিবাসী’ করার দাবি জোরালো হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে মঙ্গলবার উদযাপন হবে দিনটি।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়। আমাদের মৌলিক অধিকার এবং সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই বাংলাদেশে যে ৫৪টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী আছে তারা যেন সাংবিধানিকভাবে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পায়।’
সাংস্কৃতিক সংগঠন হিলর প্রডাকশনের সদস্য পিংকি চাকমা বলেন, ‘১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শান্তিচুক্তি হয়েছিল। এরপর ২৫ বছর কেটে গেলেও আমরা সাংবিধানিকভাবে আদিবাসীর স্বীকৃতি পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ধর্ম সবকিছু রয়েছে। তার পরও সরকার আমাদের কেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কিংবা উপজাতি বলছে তা আমরা জানি না।’
রাঙ্গামাটি পৌরসভা মাঠে মঙ্গলবার সকালে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। এতে থাকবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব পোশাকের ডিসপ্লে। এরপর আলোচনা সভা ও পরে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা হবে।
জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীর সব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি সমুন্নত রাখা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১১টি ভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। জনসংখ্যার দিক দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের পর মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। ২০১১ সালে জনশুমারি ও গৃহগণনা তথ্যানুযায়ী পার্বত্য অঞ্চলে চাকমা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪৪ হাজার।
২০২২ সালের সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী পার্বত্য অঞ্চলে চাকমা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৯ জনে। অর্থাৎ ১১ বছরে চাকমা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৯ হাজার ২৯৯।
রাঙ্গামাটি বিএম ইনস্টিটিউটের প্রভাষক ও লেখক আনন্দ জ্যোতি চাকমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতালসহ প্রায় ৫০টি জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। একটি জাতির যা প্রয়োজন, তা আমাদের আছে। নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য সবকিছু আছে। এ কারণে আমরা আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সরকার আমাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে সরকারের প্রতি বিশ্বাস আর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।’