বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মায়ের হত্যার বিচার চেয়ে রক্তে লেখা চিঠি

  •    
  • ২৯ জুলাই, ২০২২ ২০:২২

ঘটনার ৬ বছর পর গত বুধবার উত্তর প্রদেশের এক আদালত মামলার রায় দেয়। দুই মেয়ের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় বিচারক তাদের বাবা মনোজকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

উত্তর প্রদেশের বুলন্দশহরে বাবা-মা আর ছোট বোনকে নিয়ে ভালোই কাটছিল লতিকা বানসালের। তবে ২০১৬ সালের ১৪ জুনের সকাল পাল্টে দেয় দুই বোনের জীবন। এদিন চোখের সামনে মা অনু বানসালকে আগুনে পুড়ে মরে যেতে দেখে তারা। নির্মম এ ঘটনা ঘটান তাদের বাবা মনোজ বানসাল।

কেরোসিন ঢেলে স্ত্রীর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন মনোজ। যন্ত্রণায় ছটফট করা অনুর চিৎকার হয়তো পৌঁছায়নি কোথাও। চোখের সামনে মাকে পুড়তে দেখলেও কিছুই করতে পারেনি ১৫ বছরের লতিকা ও তার ১১ বছরের বোন। কারণ তাদের ঘরটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন বাবা মনোজ।

আদালতে লতিফা ও তার বোন বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৬টায় মায়ের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। আমরা তাকে সাহায্য করতে পারিনি। কারণ ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা মারা ছিল। আমরা তাকে পুড়ে মরতে দেখেছি।’

লতিকা বলেন, ‘স্থানীয় পুলিশ এবং অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবায় ফোন করলেও তারা কেউ সাড়া দেয়নি। পরে আমার মামা ও নানীকে ডেকে আনি। তাদের সাহায্যে মাকে হাসপাতালে নিই।’

চিকিৎসক ভাষ্য ছিল, অনু বানসালের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। ক’দিন পর হাসপাতালে মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় মামলা হলেও বিষয়টি আলোচনায় আসে লতিকার একটি উদ্যোগে। ন্যায়বিচার চেয়ে ১৫ বছরের লতিকা নিজের রক্ত দিয়ে চিঠি লেখেন উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে। সেখানে লতিকা লেখেন, পুলিশ হত্যা মামলাটিকে আত্মহত্যায় পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে।

সঠিক তদন্ত না করার জন্য স্থানীয় মামলার তদন্তকর্মকর্তাকে তখন বরখাস্ত করা হয়। ঊর্ধ্বতন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মামলাটি তদারকি করার নির্দেশ দেন যাদব।

ছেলে সন্তান জন্ম না দিতে পারায় স্বামীর হাতে খুন হন অনু বানসাল। ছবি: সংগৃহীত

ঘটনার ৬ বছর পর গত বুধবার উত্তর প্রদেশের এক আদালত মামলার রায় দেয়। দুই মেয়ের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় বিচারক মনোজকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

মেয়েরা আদালতে জানায়, তাদের বাবা ‘ছেলে জন্ম না দেয়ার জন্য’ তাদের মাকে মারধর করতেন।

আদালতে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন মনোজ। দাবি করেছিলেন, গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করেন তার স্ত্রী।

দুই পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষে বুলন্দশহরের আদালত মনোজকে দোষী সাব্যস্ত করে। রায়ে বলা হয়, ছেলে সন্তান জন্ম না দিতে পারায় স্ত্রীকে খুন করেছেন মনোজ। তার অপরাধ প্রমাণিত।

বংশরক্ষায় ছেলে সন্তান থাকতে হবে এমন গোঁড়ামি ভারতের অন্য প্রদেশগুলোর তুলনায় উত্তর প্রদেশে বেশি।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই বিশ্বাসের কারণে কন্যা সন্তানের প্রতি অবহেলা, দুর্ব্যবহার এবং লিঙ্গ বৈষ্যম প্রবল হয়ে ওঠে। গর্ভপাতের মাধ্যমে লাখ লাখ ভ্রূণ হত্যার পেছনে কাজ করে এই বিশ্বাস।

বিচার চলাকালীন বানসাল বোনেরা আদালতে বলেন, ‘কেবল কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় মাকে কটূক্তি ও লাঞ্চনার শিকার হতে হতো। আমরা এসব দেখেই বড় হয়েছি। কন্য সন্তান আসছে খবর পেলেই গর্ভপাত করানো হতো। ছয়’বার এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে মা।’

আইনজীবী সঞ্জয় শর্মার পাশে লতিকা। ছবি: সংগৃহীত

বোনদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী সঞ্জয় শর্মা বলেন, ‘অবশেষে বিচার পেতে আমাদের ছয় বছর, এক মাস এবং ১৩ দিন লেগেছে।

‘নিজের বাবার বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে অবশেষে ন্যায়বিচার পাওয়ার একটি বিরল দৃষ্টান্ত এটি। গত ছয় বছরে মেয়েরা একশ বারের বেশি আদালতে হাজির হয়েছে। একটি তারিখও মিস করেনি তারা।’

এ মামলায় কোনো টাকা-পয়সা নেননি জানিয়ে আইনজীবী সঞ্জয় বলেন, ‘তারা আসলে টাকা দেয়ার মতো অবস্থায় ছিল না। আর আমি এমনিতেই এসব ইস্যুতে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

‘এটি কেবল একটি হত্যা না। এটি সমাজের বিরুদ্ধে অপরাধ। সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করা নারীর হাতে থাকে না। তাবে তাকে কেন নির্যাতন করা হবে, শাস্তি দেয়া হবে? এটা পাপ।’

এ বিভাগের আরো খবর