বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্তন ক্যানসারে কেমোর চেয়েও কার্যকর ওষুধের সন্ধান

  •    
  • ১৪ জুন, ২০২২ ২২:১১

গবেষকরা এই পরীক্ষার জন্য ৫৫৭ জন স্তন ক্যানসারে আক্রান্তদের বাছাই করেন, যাদের অবস্থা বেশ জটিল। ট্রাস্টুজুমাব ডিরাক্সটেকান ওষুধ দেয়ায় পর, ১০ মাস তাদের অবস্থার আর অবনতি হয়নি। স্তন ক্যানসারের ট্রায়ালে এমন আশার খবর এটাই প্রথম।

ক্যানসার চিকিৎসায় কেমোথেরাপির কার্যকর বিকল্প এখনও বাজারে আসেনি। ওষুধের মাধ্যমে তা নিরাময়ে চলছে জোর চেষ্টা। রেকটাল (মলদ্বার) ক্যানসারে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ওষুধের সফলতা পরীক্ষামূলকভাবে সম্প্রতি পাওয়া গেছে। এবার স্তন ক্যানসার চরম অবস্থায় থাকাদের ক্ষেত্রে কেমোর চেয়ে বেশি কার্যকর ওষুধের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন জার্নালে সম্প্রতি এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ হয়

কেমোথেরাপি একটি জটিল প্রক্রিয়া। বিভিন্ন ধরনের ওষুধের মাধ্যমে ক্যানসারের সেলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়; থামানো হয় বিস্তার। যদিও সব ধরনের ক্যানসারে এ পদ্ধতি কার্যকর না। বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার সেল বিভিন্ন ওষুধে সাড়া দেয়।

স্তন ক্যানসারে আক্রান্তদের ট্রাস্টুজুমাব ডিরাক্সটেকান (Trastuzumab deruxtecan) ওষুধ প্রয়োগে দেখা গেছে, এটি ক্যানসারের বিস্তার কমিয়ে দেয়। যাদের প্রোটিন লেভেল কম তাদের ক্ষেত্রে অন্যান্য ওষুধ খুব একটা কাজ করে না। নতুন ওষুধটি সেসব রোগীর ক্ষেত্রেও কার্যকর। গবেষকরা দেখেছেন, এই ওষুধ দেয়ার ফলে অন্তত ১০ মাস টিউমার বাড়েনি। এ অবস্থার জন্য অন্তত ৫টি কেমোর দরকার পড়ে সাধারণত।

গবেষকরা এই পরীক্ষার জন্য ৫৫৭ জন স্তন ক্যানসারে আক্রান্তদের বাছাই করেন, যাদের অবস্থা বেশ জটিল। ট্রাস্টুজুমাব ডিরাক্সটেকান ওষুধ দেয়ায় পর, ১০ মাস তাদের অবস্থার আর অবনতি হয়নি। স্তন ক্যানসারের ট্রায়ালে এমন আশার খবর এটাই প্রথম।

ট্রায়ালটি বেশ অগোছালোভাবেই করা হয়েছিল। যেসব রোগী ট্রাস্টুজুমাব ডিরাক্সটেকান ওষুধটি গ্রহণ করেছিলেন, তাদের টিউমারগুলো কমপক্ষে ১০ মাস বিস্তার বন্ধ ছিল, যেখানে স্ট্যান্ডার্ড কেমোথেরাপিতে গড়ে পাঁচ মাসের জন্য বিস্তার বন্ধ হয়ে থাকে।

ট্রায়ালে অংশ নেয়া সবার হিউম্যান এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর রিসেপ্টর ২ (এইচইআর২) প্রোটিনের মাত্রা খুব কম ছিল। এ প্রোটিন ক্যানসার কোষগুলোর বিস্তারে সহায়তা করে।

এটি একটি স্বাভাবিক প্রোটিন, যা সাধারণত স্তন কোষে পাওয়া যায়। তবে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত পাঁচজনের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় এ প্রোটিন উৎপাদন করতে দেখা যায়, যা ক্যানসারকে মারাত্মক করে তোলে।

ট্রাস্টুজুমাব ডিরাক্সটেকান দিয়ে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তদের এইচইআর২ প্রোটিন উৎপাদন ঠেকাতে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে যাদের উচ্চমাত্রায় এই প্রোটিন উৎপাদন হয় না, তাদের ক্ষেত্রে খুব একটা কাজে আসেনি এই ওষুধ।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পরীক্ষামূলক ওষুধ খেয়েছিল তারা দুই বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। যেখানে স্ট্যান্ডার্ড কেমোথেরাপি নেয়ারা গড়ে ১৬ মাস বেঁচে ছিল তাদের তুলনায়।

নিউ ইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যানসার সেন্টার গবেষণাটি পরিচালনা করেছিল। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ডাইচি সানকিও এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা সেখানে বিনিয়োগ করেছিল। তারাই যৌথভাবে এই ওষুধ আবিষ্কার করে।

কীভাবে কাজ করে ওষুধ

ওষুধটি এনহার্তু নামে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এটি অ্যান্টিবডি কনজুগেটস (এডিসিস) নামক ওষুধের একটি নতুন শ্রেণির অন্তর্গত।

জেনেরিক কেমোথেরাপির মতো এই ওষুধগুলো সুস্থ কোষকেও ধ্বংস করে। ওষুধগুলো মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিকে টার্গেট করে। এই সংমিশ্রণ ক্যানসার কোষের মধ্যে থেকে সুস্থ কোষকে চিনতে সাহায্য করে।

ওষুধটি ট্রাস্টুজুমাব দিয়ে তৈরি। মানে এটি হিউম্যানেইসড মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি। এটি টপোইসোমারেজ ইনহিবিটর এবং ডিরাক্সটেকানের সঙ্গে আবদ্ধ। টোপোমেরেজ ইনহিবিটর কোষের ডিএনএ-তে কাঠামোগত পরিবর্তন এবং প্রতিলিপি তৈরিতে বাধা দেয়। যখন এটি প্রতিলিপি করার চেষ্টা করে, তখন তা ধ্বংস করে দেয়।

ট্রাস্টুজুমাব অণুগুলো শরীরের এইচইআর২ রিসেপ্টরগুলোর সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে প্রতিলিপি প্রতিরোধ করে। তারা তারপর কোষে শোষিত হয়। আর ডিরাক্সটেকান হলো কেমোথেরাপির অণু যা কোষের ভিতরে কাজ করে একবারই।

ওষুধটি ইতোমধ্যেই এইচইআর২ পজিটিভ স্তন ক্যানসারের রোগীদের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। ওষুধটি এইচইআর২ প্রোটিন যাদের কম তাদের চিকিৎসায় ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ অন্যান্য অনুরূপ ওষুধগুলো এই ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়েছে।

যদিও গবেষকরা বলছেন, ওষুধটি যেকোনো কোষে প্রবেশ করতে পারে। এর অর্থ যাদের এইচইআর২ প্রোটিন কম তাদের কোষেও প্রবেশ করবে। পরে কোষ ঝিল্লির মধ্য দিয়ে ক্যানসার কোষের মধ্যে পৌঁছে যায়।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

ওষুধ সেবনে বমি বমি ভাব দেখা যেতে পারে। ফুসফুসে জটিলতা নিয়ে মারা গেছেন তিনজন। গবেষকরা বলেছেন, যারা ওষুধ সেবন করেছেন তাদের ৫০ শতাংশ গুরুতর পরিস্থিতির মুখে পড়েছিল। যেখানে কেমো নেয়া রোগীদের ৬৭ শতাংশ এই পরিস্থিতিতে পড়ে। ওষুধ গ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ১২ শতাংশের ওষুধ-সম্পর্কিত ফুসফুসের রোগ হয়েছে।

ট্রাস্টুজুমাব ডিরাক্সটেকান সাধারণত ব্যবহার হয়ে থাকে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে। যেহেতু এটি এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে, তাই শনাক্তের শুরুতেই এটি এখনই ব্যবহার না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ওষুধটি স্তন ক্যানসার একেবারে নিরাময় করবে বলে আশা করা ঠিক না। তবে এটি উপশমকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে যতক্ষণ রোগীরা তা সহ্য করতে পারবে।

এ বিভাগের আরো খবর