নরসিংদী রেলস্টেশনে পোশাক নিয়ে এক তরুণীর হেনস্তার প্রতিবাদে সম্প্রতি একদল নারী নিজেদের পছন্দের পোশাক পরে সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রতিবাদের এই ধরন নিয়ে ফেসবুকে অনেকের প্রশংসা পেয়েছেন তারা। আবার কেউ কেউ সমালোচনায় মুখরও হয়েছেন। সমালোচনাকারীদের মধ্যে কিছু নারীও আছেন।
নারীদের পোশাক নিয়ে নারীরাও সমালোচনায় মেতে ওঠেন কেন, তার খানিকটা জবাব রয়েছে মনোবিজ্ঞানীদের কাছে। সম্প্রতি দুটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মানুষ শুধু বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব দেখায় না, সমলিঙ্গের মাঝেও রয়েছে একই ধরনের প্রবণতা। আর এই প্রবণতা একজন নারীকেও অন্য নারীর প্রতিযোগী করে তুলতে পারে।
‘পারসোনালিটি অ্যান্ড ইনডিভিজুয়াল ডিফারেন্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বেশ কয়েকজন নারীর ওপর চালানো একটি সমীক্ষার উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী নারীরা কোনো একজন নারীকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচারের ক্ষেত্রে তার পোশাকের ধরনকে গুরুত্ব দেন। তাদের ধারণা, উত্তেজক পোশাক পরা নারীটির ‘এক-রাতের-শয্যায়’ যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
জেসিকা ডি. আয়ারস এবং অ্যারন টি গোয়েটজ গবেষণাটি চালান। উত্তেজক পোশাকের কারণে কেন একজন নারীকে অপমানের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন তারা।
গবেষকরা বলছেন, ‘‘সঙ্গীকে আকৃষ্ট করতে গিয়ে অনেক নারী অন্য নারীর পোশাক নিয়ে সমালোচনায় মেতে উঠতে প্ররোচিত হন। খোলামেলা পোশাক ‘অশ্লীলতার’ ইঙ্গিত বহন করে বলে মনে করেন অনেকে, তাই তারা এমন আচরণ করে থাকেন।’’
গবেষকদের হাইপোথিসিস কিছুটা ‘যৌন অর্থনীতি’ প্রভাবিত, যেখানে যৌন মিথস্ক্রিয়াকে একটি বাজারব্যবস্থার সঙ্গেও তুলনা করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতির একটি আবহ রয়েছে, যেখানে অধিকতর মনোযোগ আকর্ষণে সমকক্ষ অপরের নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়। আর অনেক নারী এ ক্ষেত্রে অন্য নারীকে হেয় করতে তার পোশাককে গুরুত্ব দেয়ার কৌশল বেছে নেন।
বোইস স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক আয়ারস বলেন, ‘স্নাতক শেষে এ বিষয়ে গবেষণায় আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম। লক্ষ্য করেছি, একই লিঙ্গের মধ্যে প্রতিযোগিতার বেশির ভাগ ইতিহাস পুরুষের ওপরই জোর দিয়েছে।
‘যখন আমি এ বিষয়ে আরও পড়তে শুরু করি, তখন আমি লক্ষ্য করেছি বেশির ভাগ গবেষক ডারউইনের যৌন নির্বাচনের তত্ত্বের ব্যাখ্যা অনুযায়ী চিন্তা করেন। সেখানে একটি পুরুষের প্রতিযোগী লিঙ্গ এবং নারীকে লাজুক এবং খুঁতখুঁতে (সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে) হিসেবে দেখা হয়।
‘খুব কম গবেষক জানতে চেয়েছেন, নারীরাও কীভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারে। আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম, কীভাবে নারীরা পোশাক নিয়ে অন্য নারীর (কিন্তু পুরুষদের নয়) প্রায়ই নিন্দা করে থাকেন।’
আয়ার্স এবং গোয়েটজ দুটি পরীক্ষামূলক গবেষণা চালান। প্রথমটিতে সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১২ জন নারী অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে কাজ করা হয়; যাদের গড় বয়স ২৫।
গবেষণার বিষয়টি গোপন রেখে অপরিচিত এক নারীর ছবি অংশগ্রহণকারীদের দেখানো হয়। তাদের বলা হয়, আটটি ‘বিশেষ বৈশিষ্ট্যের’ ভিত্তিতে তাদের নম্বর দিতে। মোটামুটি অর্ধেক অংশগ্রহণকারী ছবির নারীকে সঙ্গিহীন বলে দাবি করেছেন।
শালীন পোশাক পরা নারীর তুলনায় ছবিতে দেখানো নারীটি একাকিত্বে ভুগছেন বলে তারা মনে করেন। এ ক্ষেত্রে তারা ওই নারীকে প্রেমিকের সঙ্গে প্রতারণা বা অন্য কারো প্রেমিকের সঙ্গে প্রতারণা, পরীক্ষায় প্রতারণা, এক-রাতের-শয্যা এবং ‘নিয়ম মেনে না চলার’ মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেন। ওই নারীকে কম বুদ্ধিমান এবং কোনো গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা কম বলেও বিচার করা হয়।
আয়ার্স বলেন, ‘নারীরা অন্য নারী সম্পর্কে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করে থাকেন। যখন একজন নারী এমন পোশাক পরতে পছন্দ করেন, যা ভীষণ উত্তেজক, সে ক্ষেত্রে ওই নারীকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য বেশি শোনা যায়। যদিও অংশগ্রহণকারীদের আগে থেকেই জানানো হয়েছিল, পোশাক কিংবা যৌনতা দিয়ে যেন কেউ ছবির নারীকে বিচার না করেন।’
দ্বিতীয় গবেষণায় ২২ বছর বয়সী ৩৪৬ জন নারীকে বেছে নেয়া হয়। তাদের একটি পরিস্থিতির বর্ণনা পড়তে দেয়া হয়, যেখানে একজন নারী একটি পানশালায় বসে তার সঙ্গীর সঙ্গে হাসি-তামাশায় ব্যস্ত। এই বর্ণনার সঙ্গে একটি নারীর ছবিও যুক্ত ছিল যার শরীরে ছিল ট্যাঁটু এবং পোশাক খোলামেলা।
সবকিছু বিবেচনা করে অংশগ্রহণকারীরা জানান, ছবির নারীর চেয়ে গল্প করা নারীকেই তারা বেশি নম্বর দেবেন। সেই নারীটি যে-ই হোন না কেন।
গবেষকরা বলছেন, ‘নারীরা মানসিকভাবে অন্যদের হয়ে বিচারের দায়িত্বও অনুভব করেন; যা তাদের অবাঞ্ছিত আচরণের প্রতি সমন্বিত নিন্দা প্রকাশের মানসিক অনুমোদন দেয়।’
আয়ার্স বলেন, ‘গবেষণার ফলাফলগুলো আমাদের অনুমানকে প্রাথমিকভাবে সমর্থন করেছে। নারীরা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দারুণ দক্ষ। আর এ জন্য তারা আকর্ষণীয় নারীদের নিন্দা করে থাকেন।’