বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়রানির শিকার ৭৪ শতাংশ ছাত্রী

  •    
  • ২৫ মে, ২০২২ ২২:৪৬

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়রানির কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ছাত্রী। বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করেন ৬ দশমিক ২ শতাংশ, পড়ালেখা ছাড়েন ৯ দশমিক ৬ শতাংশ ও অসুস্থ হয়ে পড়েন ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। আর হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন ৯০ শতাংশের ওপরে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংসতা ও হয়রানির শিকার হয় দেশের ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ ছাত্রী। খুলনায় এই হার সবচেয়ে বেশি, ৮৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এরপরই রয়েছে বরিশাল, ৮০ শতাংশ। আর রাজশাহীতে হয়রানির শিকার হয়েছে ৭৮ দশমিক ৮ শতাংশ।

এমন তথ্যই উঠে এসেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের এক গবেষণায়।

রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে বুধবার ‘সহিংসতার ভয়, আর নয়’ শীর্ষক আলোচনায় গবেষণাটির ফলাফল জানানো হয়।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং জাগো উইমেনের উদ্যোগে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।

গবেষণায় ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী দুই হাজার ২৩২ জন শিশু থেকে নারী অংশ নেন। একই বয়সের দুই হাজার ২০৮ জন শিশু থেকে তরুণ অংশ নেন।

দুই হাজার ২১৭ জন মা এবং ২ হাজার ১৯৭ জন বাবা গবেষণাটিতে অংশ নেন।

বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক প্লেসে সহিংসতা ও হয়রানির শিকার হওয়া নারীদের অবস্থা জানতে গবেষণাটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উন্নয়ন সংস্থাটি।

পারিবারিক সহিংসতাগবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী।

হয়রানি ও সহিংসতা এড়াতে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ নারী বাড়ির বাইরে বের হওয়া ছেড়ে দেন ও লেখাপড়া ছাড়েন ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। আর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ির বাইরে গিয়ে খেলাধুলা বন্ধ করেন।

পারিবারিক সহিংসতা তেমন বড় কোনো বিষয় নয় বলে মনে করেন ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ। তারা তাদের বাবা, ভাই বা স্বামীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে ভয় পান বলে গবেষণায় জানা গেছে।

পারিবারিক সহিংসতা নিরোধের আইন সম্পর্কে জানেন না ৫ দশমিক ২ শতাংশ, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে উন্নয়ন সংস্থাটি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়রানিশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়রানির শিকার হতে পারে এই ভয়ে দেশের ৫৪ শতাংশ বাবা তার মেয়েকে কোচিং অথবা প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়তে দিতে চান না। অন্যদিকে ৬২ শতাংশ মা তার মেয়েকে স্কুলের পিকনিকে পাঠাতে নারাজ।

গবেষণায় উঠে এসেছে, ৪৮ শতাংশ মা তার মেয়েকে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দিতে চান না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলে সহপাঠী বা সিনিয়রদের কাছ থেকে মোবাইলে আপত্তিকর মেসেজ পেয়েছেন ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। আর শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করেছেন ২১ দশমিক ৩ শতাংশ সহপাঠী।

পুরুষ শিক্ষকদের যৌন হয়রানির শিকার হন ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ছাত্রী। আর শিক্ষকদের কাছ থেকে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হন ৫৬ শতাংশ।

এসব হয়রানির কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ছাত্রী। বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করেন ৬ দশমিক ২ শতাংশ, পড়ালেখা ছাড়েন ৯ দশমিক ৬ শতাংশ ও অসুস্থ হয়ে পড়েন ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। আর হতাশাগ্রস্ত হন ৯০ শতাংশের ওপরে।

পাবলিক প্লেসে হয়রানিগত এক বছরে পাবলিক প্লেসে হয়রানির শিকার হন ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।

এসব হয়রানির কারণে পরীক্ষায় ফেল করেন এবং পড়ালেখায় মনোযোগ হারান ২ দশমিক ৪ শতাংশ করে।

বাড়ির বাইরে বের হওয়া বা কিছুদিনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়েন ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।

এসব হয়রানির শিকার হয়েও কাউকে কিছুই বলেননি ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ; জাতীয় জরুরি সেবা সহায়তা নেন ৩ দশমিক ৩; পুলিশকে জানান ৯ দশমিক ৩ ও মামলা করেন ২ দশমিক ৯। আর আশপাশের মানুষের কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছেন ৪৪ দশমিক ১ শতাংশ।

কর্মক্ষেত্রে হয়রানিকর্মক্ষেত্রে কটু কথা শুনতে হয় ৭৭ দশমিক ২ শতাংশ নারীকে। আর যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ।

হয়রানির শিকার হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ; চাকরি ছাড়েন ২৬ শতাংশ ও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ৪ শতাংশ।

কর্মক্ষেত্রে এসব হয়রানির প্রতিবাদ করেন ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ ও অভিভাবককে জানান ৫৪ শতাংশ।

সহিংসতা নারীকে আরও প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যায় বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তিনি বলেন, ‘নারী বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে সহিংসতার শিকার হয়। নারীকে এক সময় গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল, নারীকে শুধু প্রজননের জন্য ব্যবহার করা হতো। বর্তমানেও নারীরা ডিজিটাল মাধ্যমসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়।’

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মহিবুজ্জামান বলেন, ‘সহিংসতা নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। সহিংসতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

নারীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নারীদের উচিত তাদের জয়ের গল্প সবাইকে জানানো।’

মালালা ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ এম এইচ তানশেন মনে করেন, কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে হলে কোয়ালিটি শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।

সহিংসতার ভয় রোধে চারটি জেলায় ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রংপুরে ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আগামী ১০ বছর সংগঠনটি এই ক্যাম্পেইন চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

রংপুর থেকে ক্যাম্পেইনে অংশ নেয়া সাদমান সাবাক বলেন, ‘সমাজে নারীরা সমঅধিকার পায় না। শহরে মেয়েরা যতটুকু অধিকার পায়, গ্রামের মেয়েরা সেই তুলনায় অনেক কম পায়।’

এ বিভাগের আরো খবর