সঙ্গীর যৌন-সক্ষমতার ঘাটতির কারণে তৈরি হওয়া উদ্বেগ নারীর যৌনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। গবেষণা বলছে, উদ্বিগ্ন এসব নারীর নকল অর্গাজমের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, পুরুষ সঙ্গীর কাছে নিজের যৌন চাহিদাও আড়াল করতে শুরু করেন নারীরা।
সোশ্যাল সাইকোলজিক্যাল অ্যান্ড পার্সোনালিটি সায়েন্স জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এসেছে এসব তথ্য। সঙ্গীর পৌরুষত্ব নিয়ে নারীর অনাস্থা কীভাবে যৌন সম্পর্কে প্রভাব ফেলে, তা উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন গবেষকরা।
পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ১৩২ জন নারীর ওপর চালানো প্রাথমিক সমীক্ষায় গবেষক দলটি দেখতে পায়, যেসব নারী সঙ্গীর তুলনায় বেশি অর্থ উপার্জন করেন, তাদের তুলনায় কম উপার্জনকারী নারীরা প্রায় দ্বিগুণ মাত্রায় অর্গাজমের অভিনয় করেন।
তবে এই নকল অর্গাজমের বিষয়ে পুরুষের ভূমিকার কোনো প্রমাণ পাননি গবেষকরা। এ জন্য সঙ্গীর পৌরুষত্ব নিয়ে নারীর উদ্বেগের সঙ্গে ‘প্রতারণামূলক যৌন সম্পর্কের’ কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা অনুসন্ধানে গবেষণার পরিসর বাড়ানো হয়।
এবার গবেষকরা বেছে নেন ২৭৬ জন নারীকে, যাদের গত ছয় মাসের মধ্যে সঙ্গমের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এসব নারীর অভিজ্ঞতা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সঙ্গী পৌরুষত্বহীনতায় ভুগছেন বলে মনে করলে নারী তার নিজস্ব চাহিদার প্রকাশ কমিয়ে দেন এবং নকল অর্গাজমের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
অন্যভাবে বলা যায়, একজন নারী যখন দেখেন সক্ষমতা না থাকার পরও তার সঙ্গী নিজেকে ‘আসল পুরুষ’ হিসেবে জাহিরের কসরত করছেন, তখন তিনি তার অনুভূতিকে আঘাতপ্রাপ্ত করতে চান না। এমন অবস্থায় নারী তার চাহিদা বা অতৃপ্তিকে গোপন করতে শুরু করেন। ফলে দুজনের মধ্যে যোগাযোগহীনতা প্রকট হয়ে উঠতে শুরু করে।
গবেষণার আরেক অংশে ১৯৬ জন নারী অংশ নেন। তাদের এমন একজন পুরুষ সঙ্গীকে কল্পনা করতে বলা হয়েছিল, যার যৌন-সক্ষমতা ভঙ্গুর। এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এ ধরনের পুরুষের সঙ্গে নারীরা যৌনতাবিষয়ক আলোচনা একেবারেই অনাগ্রহী।
গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক জেসিকা জর্ডান শিগগিরই ফ্লোরিডার ইউনিভার্সিটি অফ টাম্পার সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, “আমি সব সময় যৌনতায় লিঙ্গ ভূমিকা, বিশেষ করে বিষমকামী নারী ও পুরুষ যেভাবে রোমান্টিক ও যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে সেটি বিশ্লেষণে আগ্রহী।
“একজন তরুণী হিসেবে মিডিয়া, বন্ধু এবং বয়স্ক নারীদের কাছ থেকে যৌনতার বিষয়ে অনেক তথ্য আমি পাই। এই যেমন কীভাবে একজন পুরুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এ ছাড়া একটি উপদেশ আমাকে প্রায়ই শুনতে হয়, তা হলো- আমাকে সব সময় সঙ্গীর ‘পুরুষত্বের অনুভূতি’ রক্ষার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।”
গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে জর্ডান বলেন, ‘এ বিষয়ে নারীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা ভীষণ অবাক হয়েছি। তাদের প্রায় সবাই বিশ্বাস করেন, সঙ্গীর পৌরুষত্বের অনুভূতি রক্ষায় ভূমিকা পালন করা জরুরি।’
তবে এ ধরনের ঘটনা নারীদের ক্লান্ত যৌনজীবনের দিকে ঠেলে দেয় বলেও মনে করছেন গবেষকরা।
জর্ডান বলেন, ‘গবেষণাগুলো প্রমাণ করেছে নারীরা পুরুষ সঙ্গীর পৌরুষত্ব নিয়ে উদ্বেগের শিকার হলে ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান। তারা ক্রমাগত উদ্বেগে ভোগেন এবং যৌনতা নিয়ে আলোচনা বন্ধ করে দেন। শেষ পর্যন্ত একটি অতৃপ্ত যৌনজীবনের মধ্যে ঢুকে যান।’
গবেষক দলের পরামর্শ- এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা প্রয়োজন।
জর্ডান বলেন, ‘মিলনের বিরতিতে আমরা একে-অপরের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ আলাপ-আলোচনা করে থাকি। আপনি যদি সঙ্গীকে নিয়ে উদ্বেগ্ন বোধ করেন, তাহলে সাবধানে পর্যালোচনা করে দেখুন এটা কেন হচ্ছে। বিষয়টি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে শেয়ার করুন।
‘এ ক্ষেত্রে অনেক ফলোআপ প্রশ্ন আছে। তবে বড় প্রশ্নটি হলো এর কি কোনো সমাধান আছে? পুরুষ সঙ্গী সম্পর্কে তাদের (নারীর) ধারণা কতটা সঠিক? তাদের অনুমান কি সঠিক? নাকি নারীরা সাধারণভাবে পুরুষের সম্পর্কে ভুল অনুমান করে থাকেন।’