পিরিয়ড বা মাসিকের সময় শারীরিক জটিলতায় ভোগা নারীদের কর্মক্ষেত্রে ছুটির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে স্পেন সরকার। মন্ত্রিসভা বৈঠকে মঙ্গলবার প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়।
এ ছাড়া ১৬ বছর বয়স হলে বাবা-মা বা অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই কিশোরীদের গর্ভপাতের অধিকারে সায় দিয়েছে স্পেনের মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত আরও বেশকিছু পরিকল্পনা অনুমোদন পেয়েছে।
চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে বিষয়গুলো এরপর পার্লামেন্টে তোলা হবে। আর সেখানে আইন হিসেবে পাশ হলে ইউরোপের প্রথম দেশের নাগরিক হিসেবে ঋতুস্রাবের সময় ছুটির অধিকার ভোগ করবেন স্পেনের নারীরা।
খসড়ায় এ ক্ষেত্রে মাসে তিন অথবা পাঁচ দিনের ছুটির প্রস্তাব করা হলেও মন্ত্রিসভা কোনো সময় বেঁধে দেয়নি। ফলে পিরিয়ড জটিলতা যত দিন চলবে ততদিন পর্যন্ত সবেতনে ছুটি নিতে পারবেন স্পেনের নারীরা। তবে এজন্য চিকিৎসকের সনদ থাকতে হবে।
বর্তমানে শুধু জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো এশিয়ার কয়েকটি দেশ ও জাম্বিয়ায় নারীর ঋতুস্রাবকালীন ছুটির অনুমোদন আছে।
স্প্যানিশ গাইনোকোলজি অ্যান্ড অবস্টেট্রিক্স সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, পিরিয়ডের সময় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী গুরুতর ব্যথায় ভোগেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ডিসমেনোরিয়া। পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে থেকেই ব্যথায় ভোগা নারীদের বিবেচনায় নিলে সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ডিসমেনোরিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ও জ্বর।
মন্ত্রিসভা বৈঠক সামনে রেখে স্পেনের সমতাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রদ্রিগেজ গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসব লক্ষণ (তীব্র পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ও জ্বর) কারও মধ্যে দেখা গেলে সাময়িক শারীরিক জটিলতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কাজেই পিরিয়ডের সময়কার এসব জটিলতাকেও আমাদের স্বীকার করা প্রয়োজন। এ সময়টি অত্যন্ত কষ্টকর, তাই এতে আক্রান্ত নারীদের বাড়িতে বিশ্রামের সুযোগ দেয়া উচিত।’
পাশাপাশি এক টুইটে তিনি লেখেন, ‘আমরা উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করছি, যাতে করে ব্যথা নিয়ে নারীদের কাজ করতে যাওয়া আর স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত না হয়। পিরিয়ডকে ঘিরে কলঙ্ক, লজ্জা ও নীরবতার অবসান যাতে ঘটে। আমরা অধিকার প্রশ্নে অগ্রগতি ঘটাতে চাই।’
স্পেনের বামপন্থি সরকারের এ উদ্যোগ অবশ্য বিরোধিতার মুখেও পড়ছে। বামপন্থি জোটের মধ্যে থাকা কিছু দল এবং ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যেও তৈরি হয়েছে বিভক্তি। কেউ কেউ বলছেন, এই পদক্ষেপের বিপরীত ফল হতে পারে। নারীদের নিয়োগ প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে হেয় করার প্রবণতা বাড়তে পারে।
স্পেনের মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবে ছুটির বিষয়টি ছাড়াও ঋতুস্রাবকালীন স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপে জোর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্কুলগুলোতে স্যানিটারি প্যাড সরবরাহ, প্রান্তিক এলাকার নারীদের স্যানিটারি প্যাড ও ট্যাম্পন বিনা মূল্যে প্রদান এবং সুপার মার্কেটে এসব পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট বাতিল।