বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চালচিত্র কফিশপের নারী কর্মী পাবেন পিরিয়ডের সময় ছুটি

  •    
  • ১৭ মে, ২০২২ ১৮:৩১

চালচিত্র নামের এই কফিশপটি রাজধানীর লালবাগ কেল্লার পাশে চালু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ১ জুন। ছোটখাটো উদ্যোগ, তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন আমেজের এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিস্তর পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই উদ্যোক্তার।  

পিরিয়ড বা মাসিকের সময় প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যান নারীরা। নানান শারীরিক জটিলতার মাঝেও অনেকে মুখ বুজে সামলান কর্মস্থলের দায়িত্ব।

বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথায় ভোগা নারীদের সর্বোচ্চ তিন দিন কাজ থেকে ছুটি দেয়ার প্রস্তাব মঙ্গলবার অনুমোদন পেয়েছে স্পেনে। এ ছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো এশিয়ার কয়েকটি দেশ ও জাম্বিয়ায় নারীর ঋতুস্রাবকালীন ছুটির অনুমোদন আছে।

তবে বাংলাদেশে নারীর ঋতুস্রাব এখনও নানান গোপনীয়তার বেড়াজালে বাঁধা। মাসিকের কারণে নারীর বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টিও ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত।

এমন প্রেক্ষাপটে ব্যতিক্রমী ঘোষণা এসেছে চালু হতে যাওয়া একটি কফিশপের উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে। কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞাপনে তারা বলছেন, নারী কর্মীদের পিরিয়ডের সময় থাকবে সবেতন ছুটি।

চালচিত্র নামের এই কফিশপটি রাজধানীর লালবাগ কেল্লার পাশে চালু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ ১ জুন। ছোটখাটো উদ্যোগ, তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন আমেজের এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিস্তর পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই উদ্যোক্তার।

চালচিত্র কফিশপে পার্টটাইম ওয়েটার পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে ফেসবুকে। তাতে বলা হয়েছে, নারী ওয়েটার হলে তাকে মাসে দুই দিন বৈতনিক মেনস্ট্রুয়াল লিভ দেয়া হবে।

চালচিত্রের অন্যতম স্বত্বাধিকারী নোশিন আঞ্জুমের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। নোশিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের ছাত্র রিয়াদ হোসেনের সঙ্গে মিলে তিনি চালু করতে যাচ্ছেন কফিশপটি।

চালচিত্র কফিশপের উদ্যোক্তা নোশিন আঞ্জুম (বাঁয়ে) ও রিয়াদ হোসেন

নোশিন নিউজবাংলাকে জানান, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি তার প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মীদের জন্য এই সুবিধা চালু করতে চান। এতে তার পুরুষ ব্যবসায়িক পার্টনারও সায় দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বিজনেসের প্ল্যান করছিলাম, তখন থেকেই বিষয়টা (নারী কর্মীদের পিরিয়ডের সময় ছুটি) ইন্ট্রোডিউস করার ইচ্ছা ছিল। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং আমার ফ্রেন্ড বা রিলেটিভদের মধ্যে যারা জব করছেন তাদের সমস্যা দেখেই বিষয়টি মাথায় এসেছে।

‘পিরিয়ডের সময় মানুষ অনেক স্ট্রেসড থাকে। হরমোনাল অনেক ধরনের সমস্যার মধ্যে দিয়ে যায়। এ সময় যেখানে তার একটু এক্সট্রা কেয়ার দরকার, সেখানে তাকে অন্য দিনের মতোই কাজে যেতে হয়, কাজ করতে হয়। প্রথমত ইমোশনের জায়গা থেকে, দ্বিতীয়ত আমরা আমাদের ওয়ার্কপ্লেস এমন করতে চেয়েছি যেখানে একজন নারীকে এ রকম ফিজিক্যাল স্ট্রেস নিয়ে কাজ করতে হবে না।’

স্প্যানিশ গাইনোকোলজি অ্যান্ড অবস্টেট্রিক্স সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, পিরিয়ডের সময় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী গুরুতর ব্যথায় ভোগেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ডিসমেনোরিয়া। পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে থেকেই ব্যথায় ভোগা নারীদের বিবেচনায় নিলে সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ডিসমেনোরিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ও জ্বর।

নোশিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যদি একজন পিরিয়ডের সময় সুস্থ ফিল না করেন তাহলে আমি যে আউটপুটটা চাই, দিন শেষে সেটা পাব না। আর একজন ওয়েটারকে সরাসরি কাস্টমারদের সঙ্গে ডিল করতে হয়। তিনি যদি ফিজিক্যালি-মেন্টালি ভালো ফিল না করেন তাহলে নরম্যালি বিহেভ করতে পারবে না। তাহলে আমি যে আউটকাম চাই তা নেগেটিভ হয়ে যাওয়ার চান্স আছে।

‘এর চেয়ে আমি তাকে একটা লিভ দিলাম। তিনি সুস্থ হয়ে পরদিন এলেন। এতে দুজনেরই সুবিধা হবে। এটা কিন্তু অন্য যে সিক লিভ আছে তার মধ্যে পড়বে না।’

এই ছুটির কারণে উদ্যোক্তা হিসেবে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখছেন না নোশিন। বরং তিনি মনে করছেন, এই ছুটির বিনিময়ে যা তারা পাবেন তার অর্থমূল্য নির্ধারণ করা যায় না।

তিনি বলেন, ‘যখন কোনো পার্টটাইম ওয়েটার পিরিয়ডের কারণে ছুটিতে থাকবেন, তখন তাকে তার কাজ নিয়ে ভাবতে হবে না। সে সময় অন্য কোনো ওয়েটার ওভারটাইম করতে পারবেন বা কাউকে পাওয়া না গেলে আমি বা আমার পার্টনার রিয়াদ কাজগুলো করব।’

নোশিন জানান, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আপাতত তারা অন্য পদের কর্মীদের জন্যও এই ছুটি চালু করতে পারছেন না। তবে ভবিষ্যতে সার্বক্ষণিক নারী কর্মীদের জন্যও এই ছুটি চালুর ইচ্ছা আছে।

নোশিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যত সিভি এসেছে তাতে নারী-পুরুষের রেশিও ৪০-৬০। তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর আগে আমরা যখন বারিস্তা বা ফুলটাইম ওয়েটারের জন্য সিভি চেয়েছি, তখন একজন নারীরও সিভি আসেনি।

‘আমার কাছে মনে হয় এবার অনেক মেয়ে এই পিরিয়ডের সময় ছুটির কারণেই অ্যাপ্লাই করেছেন। হয়তো পেমেন্ট কম, কিন্তু মাসের একটা নির্দিষ্ট সময় পেইড লিভ পাওয়া যাবে। এটা ভেবেই তারা সিভি পাঠিয়েছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এই দুই শিক্ষার্থীই চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহী। তাই তারা কফিশপটি সাজাচ্ছেন সিনেমাটিক থিমে। শপ চালুর কিছুদিনের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে সেখানে।

নোশিন বলেন, ‘যেসব উদীয়মান নির্মাতা আর্থিক সমস্যার কারণে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর জায়গা পান না, তাদের আমরা একটি প্ল্যাটফর্ম দিতে চাই। সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিন উদীয়মান নির্মাতাদের চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। এর জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে সামান্য কিছু ফি নেয়া হতে পারে, যার পুরোটাই দেয়া হবে ওই নির্মাতাকে।’

এ বিভাগের আরো খবর