‘ওগো মা তুমি শুধু মা/পৃথিবীতে নেই তুলনা।’
দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া গানের উল্লিখিত দুটি লাইনে মায়ের অতুলনীয় অবস্থান তুলে ধরেছিলেন জনপ্রিয় শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ও খালিদ হাসান মিলু।
যুগে যুগে তাদের মতো অনেক শিল্পী গেয়েছেন মায়ের স্তুতি। সাহিত্যিক, দার্শনিকের লেখনী, বাণীতে উঠে এসেছে মায়ের অবস্থান। সে পরম্পরা রয়েছে; থাকবে চিরকাল।
এ কারণে মায়েদের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা প্রকাশের জন্য দিনক্ষণ দরকার হয় না। মানুষ তবুও আনুষ্ঠানিকতা ভালোবাসে। যেকোনো বিষয় উদযাপনকে স্থায়ী করতে বেছে নেয় বিশেষ কোনো দিন।
সে জায়গা থেকে মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বিশ্বজুড়ে উদযাপন করা হয় ‘মা দিবস’। বিশেষ এ দিনে মা ও মাতৃস্থানীয়দের প্রতি আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় দেশে দেশে। যদিও সেটি একই সময়ে হয় না।
সময় ও দিবসকেন্দ্রিক ওয়েবসাইট টাইম অ্যান্ড ডেট ডটকমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ বছর মের দ্বিতীয় রোববার (৮ মে) মা দিবস উদযাপন করছে ৪৬টি দেশ। এর আগে মাসের প্রথম রোববার (পয়লা মে) মা দিবস উদযাপন করে চার দেশ।
চলতি বছরের ৮ মার্চ দিবসটি উদযাপন হয় তিনটি দেশে। অন্যদিকে ১০ মে দুটি এবং ২৯ মে ছয়টি দেশ উদযাপন করবে মা দিবস।
কীভাবে হয় উদযাপন
দেশ ও সংস্কৃতিভেদে মা দিবস উদযাপনে ভিন্নতা দেখা যায়। দিনটিতে নানা বয়সী মানুষ মা ও মাতৃস্থানীয়দের স্মরণ করেন। মাতৃস্থানীয় বলতে বোঝায় সৎমা, শাশুড়ি কিংবা মাতৃতুল্য কোনো অভিভাবক।
তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে পশ্চিমা দেশগুলোতে কার্ড, ফুল বা কেক উপহারের প্রচলন আছে। বাংলাদেশেও এর চল আছে।
পারিবারিক জমায়েত বা মায়েদের দেখতে যাওয়ার বিষয়টিও বিভিন্ন দেশে বা সংস্কৃতিতে রয়েছে। এর বাইরে দিবসে মাকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে কিংবা বাইরে নাস্তা, দুপুর বা রাতের খাবার খেয়ে থাকেন অনেকে। যেসব সন্তান দূরে থাকেন, তারা মা বা মাতৃতুল্যদের ফোন কল করে থাকেন।
মা দিবসকে কেন্দ্র করে কবিতা ও খুদেবার্তার প্রচলনও দীর্ঘদিনের। এর বাইরে চকলেট, স্বর্ণালংকার, দরকারি সামগ্রী, জামা-কাপড়, শখের জিনিস, হাতে তৈরি সামগ্রী উপহার দেয়ার বিষয়টিও নতুন নয়।
কোন দেশে কখন মা দিবস
অস্ট্রেলিয়া, কানাডা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে মের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস উদযাপন হয়। যুক্তরাজ্যে দিবসটি উদযাপন হয় ইস্টার সানডের ঠিক তিন সপ্তাহ আগে। এসব দেশে রোববার সাধারণত স্কুল কিংবা কর্মস্থল খোলা থাকে না।
কিছু কিছু দেশে মা দিবসে ছুটি থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোস্টারিকায় ১৫ আগস্ট মা দিবস উদযাপন করা হয়। ওই দিন রাষ্ট্রীয় ছুটি থাকে।
জর্জিয়ায় ৩ মার্চ, সামোয়ায় মের দ্বিতীয় সপ্তাহ এবং থাইল্যান্ডে ১২ আগস্ট মা দিবসের ছুটি থাকে। দিনগুলোতে এসব দেশের রেস্তোরাঁয় ভিড় লেগে থাকে।
দিবসের শুরু যখন
কিছু সূত্রের বরাত দিয়ে টাইম অ্যান্ড ডেট ডটকম জানায়, প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় স্রষ্টাদের জননী রিয়ার স্মরণে উদযাপন হওয়া বসন্ত উৎসব থেকে মা দিবসের সূচনা। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যে ‘মাদারিং সানডে’ নামের একটি দিবস উদযাপন হয়।
ওই দিবসে দীক্ষা নেয়া গির্জায় যেত খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা। বর্তমান সময়ে দিনটিতে মাতৃত্বও উদযাপন করা হয়।
আধুনিককালে মা দিবস উদযাপনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুই নারীর নাম। তারা হলেন জুলিয়া ওয়ার্ড হোয়ে ও অ্যানা জারভিস। যুক্তরাষ্ট্রে দিবসটির সূচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাদের।
১৮৭০ সালের দিকে জুলিয়া ওয়ার্ড প্রতি বছর মা দিবস উদযাপনের ডাক দেন। তার নেতৃত্বে প্রায় ১০ বছর বোস্টনে দিবসটি উদযাপন হয়। এর পর আর সেটি চালু থাকেনি।
অন্য কিছু সূত্র জানিয়েছে, অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দশকে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের আলবিয়নে মা দিবসের প্রচলন করেন জুলিয়েট ক্যালহুন ব্লেকলি। ছেলেরা প্রতি বছর তাকে সম্মান জানাতেন এবং অন্যদেরও মায়েদের প্রতি সম্মান জানাতে বলতেন।
১৯০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্র্যাফটনে মা অ্যান জারভিসের স্মরণে ব্যক্তিগত পরিসরে মা দিবস উদযাপন করেন অ্যানা জারভিস। ১৯০৮ সালে চার্চে একটি আয়োজনে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। সে আয়োজনে যুক্ত হয় ৪০৭ শিশু ও তাদের মায়েরা।
১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠা হয় মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন। এ সংস্থার লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্য দেশে উদযাপন ছড়িয়ে দেয়া। সে বছর থেকে বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে মা দিবস।