বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নারীর জন্য আপাদমস্তক বোরকা ফিরিয়ে আনল তালেবান

  •    
  • ৭ মে, ২০২২ ২১:৩২

আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ নেতা ও তালেবানপ্রধান হিবাতুল্লা আখুন্দজাদা শনিবার কাবুলে এক অনুষ্ঠানে এই আদেশ জারি করেন। এতে বলা হয়, ‘তাদের (নারী) চাদোরি (মাথা থেকে পা পর্যন্ত বোরকা) পরা উচিত। কারণ এটি ঐতিহ্যবাহী এবং সম্মানজনক।’

আফগানিস্তানে নারীর প্রতি আইন আরও কঠোর করল দেশটির শাসনে থাকা তালেবানরা। নব্বইয়ের দশকের মতো আফগান নারীদের আপাদমস্তক বোরকা পরার নির্দেশ দিয়েছে তালেবান। অর্থাৎ পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্দা করতে হবে নারীদের। নতুন এই আদেশে স্বাধীনচেতা অন্তত দুই কোটি আফগান নারীর স্বপ্ন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যেতে পারে।

আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ নেতা ও তালেবানপ্রধান হিবাতুল্লা আখুন্দজাদা শনিবার কাবুলে এক অনুষ্ঠানে এই আদেশ জারি করেন। এতে বলা হয়, ‘তাদের (নারী) চাদোরি (মাথা থেকে পা পর্যন্ত বোরকা) পরা উচিত। কারণ এটি ঐতিহ্যবাহী এবং সম্মানজনক।’

গত আগস্টে কাবুল দখলের পর নারী অধিকার রক্ষায় সচেতন ভূমিকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তালেবান শাসকরা। কিন্তু ক্ষমতা পোক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আসল রূপে ফিরতে থাকে উদ্রবাদী তকমা পাওয়া তালেবান।

নারীদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয় চাকরির অধিকার, বন্ধ করে দেয়া হয় নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকের পর নারী ছাত্রীদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দেয় তালেবান।

বিবিসির খবরে বলা হয়, কোনো নারী আদেশ মানতে ব্যর্থ হলে, তার পুরুষ অভিভাবক তাদের বোঝানোর চেষ্টা করবে। এতেও কাজ না হলে ভাইস অ্যান্ড ভার্টিউ মন্ত্রণালয় তাদের ডেকে পাঠাবে। এর পরও আদেশ মানতে রাজি না হলে পুরুষ অভিভাবককে তোলা হবে আদালতে। জেল হতে পারে তার তিন দিনের।

৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর তালেবানদের ক্ষমতাচ্যুত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। দুই দশক ধরে গোপনে তৎপরতা চালিয়ে আসছিল তালেবান।

নব্বইয়ের দশকের তালেবান শাসনে আফগান নারীরা মৌলিক অধিকারের গুরুতর অভাবে ভোগে। তারা পুরুষ আত্মীয় ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারতেন না, বয়স আট পেরোনোর পর কাজ কিংবা শিক্ষাগ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল।

শুধু তা-ই নয়, পুরুষ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া বারণ ছিল নারীদের। অথচ দেশটিতে চিকিৎসকের সংখ্যা হাতেগোনা। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হতেন বেশির ভাগ আফগান নারী।

এ ছাড়া নেইল পলিশ দেয়ার কারণে এক নারীর আঙুল কেটে ফেলার ঘটনাও সে সময়ে স্বাভাবিক ছিল। এসব সাজা দেয়া হতো প্রকাশ্যে। পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ছিল আলোচিত।

তবে এবার ক্ষমতায় আসার পর তালেবানের বুলিতে আশায় বুক বেঁধেছিলেন আফগান নারীরা। তারা বলেছিল, নারীদের শিক্ষাগ্রহণ এবং কাজ করার অনুমতি দেবে তারা। গত ডিসেম্বরেই শাসকরা জানিয়েছিলেন ‘নারীরা সম্পত্তি নয়’। কিন্তু শাসনের ৯ মাসে একের পর এক প্রতিশ্রুতি ভাঙতে দেখা গেছে তালেবানদের।

নব্বইয়ের দশকের কট্টর শাসনে পুরোপুরি ফিরে না গেলেও নারী অধিকারগুলো এক এক করে কেড়ে নিচ্ছে তালেবান।

মার্চে হঠাৎ করেই মেয়েদের মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা দেয় তালেবান। আফগান মেয়েরা কেবল প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতে পারবে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ হয় নারীর ওপর। বলা হয়, একজন পুরুষ আত্মীয় ছাড়া ৪৫ মাইলের বেশি ভ্রমণ করতে পারবেন না কোনো নারী; সিনেমা এবং টিভি শোতে অংশ নিতে পারবেন না তারা। একই সঙ্গে পুরুষদের সঙ্গে বা সরকারে কাজ করার অনুমতি পাবেন না তারা।

এতসব কড়াকড়ি অবশ্য মাথা পেতে নিয়েছেন বেশির ভাগ আফগান। এর অন্যতম কারণ চার কোটি জনসংখ্যার আফগানিস্তানের ৭০ শতাংশ মানুষই বাস করেন গ্রামে।

ইউএন উইমেন এবং লিঙ্গসমতা নিয়ে কাজ করা সংস্থা প্রমুন্ডোর ২০১৯ সালে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, ১৫ শতাংশ আফগান পুরুষ বিশ্বাস করেন বিয়ের পর নারীদের কাজ করার অনুমতি দেয়া উচিত। অন্যদিকে দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ বলছেন, আফগান নারীদের ‘অত্যধিক অধিকার’ দেয়া হয়েছে।

ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, আফগান সমাজ ভীষণ পুরুষতান্ত্রিক। তবে পরিবার এবং ব্যক্তিক্ষেত্রে সম্প্রদায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন গোত্রে এখনও নিজস্ব বিচারব্যবস্থা চালু আছে।

১৯৬৪ সালে আফগানিস্তানের সংবিধানে নারী অধিকারের বিষয়টি যুক্ত হয়। এতে আনুষ্ঠানিকভাবে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর