আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালেবানের বিভিন্ন নেতা বলেছেন, শরিয়াহ আইন দেশে ফের প্রবর্তন হবে। আফগান নারীদের সে আইন অনুযায়ী জীবনচর্চা করতে হবে।
নব্বই দশকে তালেবানের শাসনামলে শরিয়াহ আইনের নামে নারীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়।
নারীর প্রতি তালেবানের দৃষ্টিভঙ্গি শরিয়াহসম্মত কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ মুসলমানদের মধ্যে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর সোশ্যাল পলিসি অ্যান্ড আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের গবেষণা পরিচালক ডালিয়া মোজাহেদ এ নিয়ে আল জাজিরায় একটি কলাম লিখেছেন।
ডালিয়ার মতে, সপ্তম শতাব্দীতে নারীদের সম্পদ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি নাকচ করে দেয় ইসলাম। এর পরিবর্তে আর্থিক সিদ্ধান্ত ও সম্পদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের আসনে বসানো হয় নারীকে।
শুধু তা-ই নয়, বিয়ের সঙ্গী পছন্দের পাশাপাশি তার সঙ্গে বিচ্ছেদের অধিকারও নারীকে দেয়া হয়।
ইসলামে নারীর চাকরি করা নিয়ে কী বলা রয়েছে?
এ প্রশ্নের উত্তরে ডালিয়া জানান, বিশ্বাসীদের প্রথম প্রজন্ম থেকেই চিকিৎসাকর্মী থেকে শুরু করে যোদ্ধা-জীবনের সব ক্ষেত্রেই নারীদের বিচরণ দেখা যায়।
উদাহরণ হিসেবে রুফাইদা আল-আসলামিয়ার কথা বলা যায়।
আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা, অন্য নারীদের নার্স হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখায় মহানবী (সা.) নিজে রুফাইদাকে সার্জনের স্বীকৃতি দেন।
যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক পুরুষ যেখানে পালিয়ে যায়, সেখানে মহানবীকে বাঁচান নুসাইবাহ বিনতে কাব। এ জন্য ‘নবীর ঢাল’ নামে পরিচিতি পান তিনি।
নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনীয়তায় জোর দেয় ইসলাম।
বিশ্বের প্রথম জ্ঞাত বিশ্ববিদ্যালয় মরক্কোর ফেজ শহরের ইউনিভার্সিটি অফ আল-কারাউয়িইন এক হাজার বছরের বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠা করেন ফাতিমা আল-ফিহরি নামের এক মুসলমান নারী।
ফাতিমা ও তার বোন মরিয়ম উচ্চশিক্ষিত ও ধর্মবিশ্বাসী মানুষ ছিলেন।
বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ দুই বোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
ইউরোপীয় দেশগুলোর কয়েক শতাব্দী আগে থেকেই মুসলমান নারীরা সম্পদের ভাগ পেতেন।
জ্ঞানের প্রতি ফাতিমা ও মরিয়মের অগাধ আগ্রহ বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়।
চার বছর আগে যুক্তরাজ্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ আকরাম নাদউয়ির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় ডালিয়ার। হাদিসের নারী পণ্ডিতদের নিয়ে জ্ঞানকোষ রচনা করেন নাদউয়ি।
তিনি জানান, শুরুতে নারী হাদিস পণ্ডিতদের নিয়ে ছোট বই লেখার কথা ভেবেছিলেন তিনি। গবেষণার একপর্যায়ে দেখেন, নারী পণ্ডিত কয়েকজন নয়, হাজার হাজার রয়েছে। প্রায় ৯ হাজার নারী পণ্ডিত নিয়ে অবশেষে ৫৭টি খণ্ডে লিখতে সক্ষম হন তিনি।
নাদউয়ি তার গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, আরও হাজার হাজার নারীকে নিয়ে লিখতে পারবেন তিনি।
নাদউয়ি আরও জানান, মুসলমানদের ঐতিহ্যের স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত অনেক পণ্ডিতেরই নারী শিক্ষক ছিল। নারীরা কেবল তাদের শিক্ষার্থীই ছিলেন না।
এসব বাস্তবতা সত্ত্বেও নারীর প্রতি তালেবানের আচরণকে ইসলামের বিচ্যুতি নয়, ধর্মসম্মত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কাবুল পতনের পর এরই মধ্যে আফগানিস্তানে শরিয়াহ আইনের নামে নারীদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা শুরু করেছে তালেবান।
জোর করে নারীদের তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।
এমনকি জনসমক্ষে তাদের বেত্রাঘাত করা হচ্ছে বলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে সম্প্রতি প্রকাশ হয়।