বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভালো নেই ফরিদপুরের যৌনপল্লির বাসিন্দারা

  •    
  • ১০ আগস্ট, ২০২১ ০৯:১৯

মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধে বিপাকে পড়েছেন যৌনপল্লির বাসিন্দারা। তাদের পেটে এখন দুবেলা ঠিকমতো ভাত জুটছে না। তার ওপর প্রত্যেক দিনের বাড়িভাড়া পরিশোধের চাপ।

খদ্দের নেই, ঘরে নেই খাবার। ঘর ভাড়া নিয়ে চোখেমুখে দেখছেন অন্ধকার। লকডাউনে ফরিদপুরের রথখোলা ও সিঅ্যান্ডবি ঘাট যৌনপল্লির বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধে বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা। তাদের পেটে এখন দুবেলা ঠিকমতো ভাত জুটছে না। তার ওপর প্রত্যেক দিনের বাড়িভাড়া পরিশোধের চাপ। কষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারছেন না যৌনকর্মীরা।

জানা যায়, শহরের রথখোলা ও সিঅ্যান্ডবি ঘাট এলাকায় অবস্থিত দুটি যৌনপল্লিতে প্রায় ৮০০ যৌনকর্মী রয়েছেন। গত বছর থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব ও কঠোর বিধিনিষেধের কারণে খদ্দের না আসায় রোজগার কমে গেছে।

২০ বর্গফুটের একটি ঘরের দৈনিক ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। কোনো কোনো বাড়িওয়ালা এর মধ্যেই চাপ প্রয়োগ করে টাকা আদায় করেন। আবার এর মধ্যে দুই-একজন আছেন, যারা সহানুভূতিশীল; করোনার জন্য ভাড়া নেন কম, এমনকি সাহায্যও করে থাকেন।

ফরিদপুর শহরের হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারের পাশে অবস্থিত রথখোলা যৌনপল্লির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। শহরের কুমার নদের পাড়ে অবস্থিত শতবর্ষের পুরোনো এই পল্লিতে ৫ শতাধিক যৌনকর্মী ছিলেন। গত বছর থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব, সাধারণ ছুটি, কঠোর বিধিনিষেধের কারণে বেশির ভাগ নিবাসী জীবিকার সন্ধানে অন্য যৌনপল্লিতে চলে গেছেন।

শহরের রথখোলার যৌনকর্মী রাশেদা জানান, প্রায় এক বছর ধরে লকডাউনের কারণে রোজগার একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। ঘরে অভাব দেখা দিয়েছে। পল্লির ভেতরে কারও কাছে সাহায্য পাওয়ারও সুযোগ নেই। সকলেরই একই অবস্থা।

আরেক যৌনকর্মী সুফিয়া বলেন, ‘খদ্দের যাও দুই-একজন আসে, যা রোজগার হয় তা ঘর ভাড়ায় দিয়া দিতে হয়। ঘর ভাড়া না দিলে বাড়িওয়ালার লোকজন অত্যাচার করে। অনেক টাকা ঘর ভাড়া বাকি পইড়া গেছে।’

যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘জয় নারী সংস্থা’র সভাপতি আলেয়া বেগম বলেন, বর্তমানে রথখোলা পল্লিতে সাড়ে ৩০০ যৌনকর্মী আছেন। এ ছাড়া পল্লিতে আছে অন্তত ১২৫ শিশু। তাদের ভরণপোষণে সমস্যা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, লকডাউনের কারণে খদ্দের কম আসায় রোজগার কমে গেছে। এখন অনাহারে দিন কাটছে যৌনকর্মীদের।

কথা হয় সিঅ্যান্ডবি ঘাট যৌনপল্লির বাসিন্দা মারুফার সঙ্গে। তিনি জানান, এই পল্লি পদ্মা নদীসংলগ্ন এলাকায় হওয়ায় এখানে বেশির ভাগ খদ্দের কার্গো বা জাহাজের শ্রমিক-কর্মচারীরা। করোনার কারণে ঘাটে জাহাজ না ভেড়ায় কষ্টের মধ্যে দিয়ে তাদের চলতে হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, খদ্দের আসুক, না আসুক, ভাড়া দিতেই হবে। সে কারণে অনেকে পালিয়ে চলে গেছেন।

আরেক যৌনকর্মী রাশেদা বলেন, রোজগার নাই, পেটে ভাতও নাই, কিন্তু বাড়িওয়ালার অত্যাচার আছে।

যৌনকর্মী সুমি আক্তারের বাড়ির কেউ জানে না তার ঠিকানা। পরিবারের সকলে জানে তিনি ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন। বাড়িতে তার ছেলে-মেয়ে আছে। তাদের জন্য প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে হয়। করোনার লকডাউনের কারণে তিনি নিজেই দুমুঠো খেতে পারছেন না, ছেলে-মেয়ের জন্য কী পাঠাবেন?

সুমির স্বামী মারা গেছেন অনেক দিন আগে। মা-বাবার কাছে ছেলে-মেয়েকে রেখে এখানে আছেন তিনি।

কথা হয় আরেক যৌনকর্মী সালমার সঙ্গে। তিনি জানান, করোনাকালীন ত্রাণ হিসেবে একবারই কিছু চাল ও নগদ ৫০০ টাকা পেয়েছিলেন। এরপর আর কেউ খোঁজ নেয়নি।

নার্গিস বেগম বলেন, ‘দোকান থাইকা বাকিতে চাল, ডাল, মাছ আইনা খাইছিলাম। এখন আর কেউ বাকি দেয় না। ভাতের সঙ্গে আলু ভত্তা দিয়া কোনোরকমে একবেলা খাইয়া বাইচা আছি।’

আছমা বেগমের বাড়ি বরিশালে। বলেন, ‘এতিম অসহায়ের মতো পইড়া আছি, কেউ দেখার নাই, কেউ খোঁজও নেয় না। লকডাউনের সময় আমাদের বাড়ি ভাড়া মাফ কইরা বা কমায়ে দিলে একটু বাঁচতে পারতাম।’

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজা জানান, ঈদুল আজহার আগে সিঅ্যান্ডবি ঘাটে অবস্থিত যৌনপল্লির বাসিন্দাদের মাঝে প্রত্যেককে চাল ও নগদ ৫০০ টাকা করে দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া রথখোলার যৌনপল্লির বাসিন্দাদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়, যদিও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রুতুল। তারপরেও যদি কেউ নিজেদের খুব অসহায় মনে করে, তাহলে জেলা প্রশাসকের কাছে সহায়তার আবেদন করলে তাদের সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর