কানাডার মানিটোবা প্রদেশে একটি সাবেক আবাসিক স্কুলে আদিবাসী শিশুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত চলছে। এতদিনেও আসেনি কোনো সিদ্ধান্ত।
স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) মানিটোবা শাখা মঙ্গলবার প্রকাশ করে এ তথ্য।
তারা জানায়, ২০১১ সালে শুরু হওয়া ওই তদন্ত চলছে এখনও।
তথ্যপ্রমাণ যাচাই করা হচ্ছে বলে এখন পর্যন্ত কোনো ফৌজদারি অভিযোগও গঠন করা হয়নি।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, সাধারণত তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কখনো বিষয়বস্তু নিয়ে মন্তব্য করে না কানাডিয়ান পুলিশ।
আরসিএমপি জানিয়েছে, ভুক্তভোগী, সন্দেহভাজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যের গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বিকল্প নেই।
তদন্তাধীন সাবেক আবাসিক প্রতিষ্ঠানটির নাম ফোর্ট অ্যালেকজান্ডার স্কুল। কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ও আদিবাসী শিশুদের জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া বিপুলসংখ্যক সাবেক আবাসিক স্কুলের একটি মানিটোবার প্রতিষ্ঠানটি।
১৯৭০ সালে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। তার আগে দীর্ঘদিন সেখানে পদ্ধতিগত নির্যাতনের অভিযোগ করে এসেছেন অধিকারকর্মী ও বেঁচে যাওয়া ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীদের সন্ধানে ৭ শতাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭৫ প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য নথিভুক্ত হয়েছে।
সম্প্রতি কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও সাসকাচোয়ান প্রদেশে বেশ কয়েকটি সাবেক আবাসিক স্কুলে এক হাজারের বেশি অচিহ্নিত কবর শনাক্তের ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় আসে দেশটিতে আদিবাসী নিপীড়নের বিষয়টি।
আদিবাসী নিপীড়ন কার্যক্রমের কেন্দ্রে ছিল রোমান ক্যাথলিক চার্চ পরিচালিত কানাডার আবাসিক শিক্ষাব্যবস্থা। কানাডার তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করত চার্চগুলো।
১৮৩১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এ ব্যবস্থার আওতায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল দেড় লাখ আদিবাসী শিশুকে। তাদের জোর করে খ্রিস্টানদের আবাসিক স্কুলে রেখে দেয়া হতো, খেতে দেয়া হতো না; চালানো হতো শারীরিক ও যৌন নির্যাতন।
গত ১০০ বছরের বেশি সময়ে এসব স্কুলে আদিবাসী শিশুদের ওপর চলা নির্মমতা নিয়ে যথেষ্ট তথ্য নেই কানাডা সরকারের হাতে। ফলে অপরাধীদের কখনো জবাবদিহিতার মুখেও পড়তে হয়নি।
কানাডার ট্রুথ অ্যান্ড রিকন্সিলিয়েশন কমিশন ২০১৫ সালে ‘সাংস্কৃতিক জেনোসাইড’বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে আবাসিক শিক্ষাব্যবস্থাকে এই জেনোসাইডের কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়।