বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তাদের কথা কেউ বলে না, তাই এলো ‘হিজড়া টিভি’

  •    
  • ১৫ জুলাই, ২০২১ ১৬:২৯

‘ট্রান্সজেন্ডার মানুষের প্রতি আমাদের যথেষ্ট সহানুভূতি আছে। আমরা চাই তারা সমাজের মূল স্রোতে আসবেন। মূল ধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে তারা যুক্ত হবেন। সেখানে আরও বেশি বেশি নিজেদের অধিকার ও বঞ্চনার কথা বলবেন।’

হাতে বুম নিয়ে মুদি দোকানের দিকে এগিয়ে এলেন একজন। পরনে সালোয়ার কামিজ। তার পেছনে মোবাইল ক্যামেরা হাতে আছেন আরেকজন। লাইভ ভিডিও করছেন।আগে এ ধরনের কাউকে এগিয়ে আসতে দেখলে দোকানদার বিরক্ত হতেন। তাড়িয়ে দিতে চাইতেন। বেশির ভাগ সময়ই তারা আসতেন টাকার দাবিতে। তবে এবার তারা এসেছেন ভিন্ন রূপে। তাদের এই রূপে দেখে দোকানদারও বিস্মিত।ক্যামেরা-বুম হাতে আসা দুজনই ট্রান্সজেন্ডার। সমাজে যাদের পরিচয় ‘হিজড়া’ হিসেবে। তারা নিজেরা একটা ফেসবুক পেজ খুলেছেন। নাম দিয়েছেন ‘সিলেট হিজড়া টিভি’। এই ‘টিভি’র হয়েই শাটডাউনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দুঃখ-কষ্টের কথা জানতে ক্যামেরা-বুম নিয়ে বের হয়েছেন তারা।‘সিলেট হিজড়া টিভি’র স্লোগান- ‌‘আমরা আমাদের কথা বলব’। নিজেদের কথা তুলে ধরতেই এই ফেসবুক পেজ খুলেছেন সিলেটের ট্রান্সজেন্ডার কয়েকজন নাগরিক। বুধবার বিকেলে সিলেটের সুরমা নদীর তীরের চাঁদনীঘাটে নিজেরাই তাদের এই ‘টিভির’ উদ্বোধন করেন।

বুম হাতে দোকানে গিয়েছিলেন যিনি তার নাম কারিশমা। নিজেকে পরিচয় দেন ‘কারিশমা হিজড়া’ হিসেবে। বৃহস্পতিবার ‘সিলেট হিজড়া টিভি’ পেজে গিয়ে দেখা যায়- একাধিক লাইভ ভিডিও দেয়া রয়েছে পেজে। বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন বিষয়ে এসব লাইভ করা হয়েছে। সবগুলোতেই ক্যামেরার সামনে রয়েছেন কারিশমা।নিজেরা একটি ‘টিভি’ খোলা প্রসঙ্গে কারিশমা বলেন, ‘আমাদের কথা কেউ বলে না। আমরা মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। সাংবাদিকরা অনেক বিষয়ে লেখালেখি করে কিন্তু আমাদের বিষয় সেইভাবে তুলে ধরে না। তাই আমরা নিজেরাই একটি টিভি চালু করেছি। যেখানে আমরা আমাদের বিষষয়গুলো তুলে ধরব। আমাদের অধিকারের কথা বলব। আমাদের সম্পর্কে মানুষের মনে অনেক ভুল ধারণা আছে, এগুলো ভাঙার চেষ্টা করব। তবে কেবল আমাদের বিষয় না, আশপাশের সব বিষয় আমরা আমাদের টিভির মাধ্যমে তুলে ধরব।কারিশমা বলেন, ‘আমরা সাংবাদিক না তবে সাংবাদিক হওয়ার চেষ্টা করব। আমরা লেখপড়া করে সাংবাদিক হইনি। আমাদের ভুলত্রুটি থাকবে। আপনারা ক্ষমা করবেন। সিলেটের যে হিজড়া আছে, আমরা তাদের জীবনমান তুলে ধরব।’এই ফেসবুক পেজ, যাকে তারা টিভি বলছেন, এটির চেয়ারম্যান ‘রানী মুখার্জি হিজড়া’। নিজের শিষ্যদের নিয়ে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকায় থাকেন রানী। ‌‘সিলেট হিজড়া বাউল সংগঠন’ নামে একটি সংগঠনেরও চেয়ারম্যান তিনি।মাস দুয়েক ধরেই এই ‌‘টিভি’ চালুর পরিকল্পনা করছেন বলে জানান রানী। সিলেটে প্রায় ৫০০ ট্রান্সজেন্ডার রয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জনের মতো এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আছেন জানিয়ে রানী বলেন, ‘‘ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে যারা শিক্ষিত তাদের এই ‘টিভির সাংবাদিক’ হিসেবে যুক্ত করা হবে।‘’হঠাৎ টিভি চালুর পরিকল্পনা এলো কী করে, জানতে চাইলে রানী বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে আছি। আমাদের কথা কেউ বলে না। আমরা আমাদের কথা তুলে ধরতে চাই। এ কারণে এই চ্যানেল করেছি।‘আমাদের কিছু সদস্য চাকরি, কয়েকজন ব্যবসা আর বেশির ভাগ সদস্যই ‘হিজড়া সংস্কৃতি’ পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে। হিজড়া সংস্কৃতি হলো দোকানে দোকানে ঘুরে টাকা সংগ্রহ করা। কিন্তু শাটডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকায় তাদের আয়-রোজগার একেবারে বন্ধ। ফলে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। বিকল্প আয়ের চিন্তা থেকেও এই টিভি করা হয়েছে।’নিজেদের কথা, সমাজের কথা তুলে ধরা হলো, আবার কিছু আয়ও হলো- যুক্ত করেন রানী।রানী বলেন, ‘এই টিভির মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিভার কথা তুলে ধরব। আমাদের ভয়েস রেইজ করতে হবে। না হলে হবে না।’দর্শকদের তিনি বলেন, ‘সবাই আমাদের সহযোগিতা করবেন। আমরাও আপনাদের মতো মানুষ। আমাদের অবহেলা করবেন না।’‘সিলেট হিজড়া টিভি’র বুধবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ফেসবুকে নিজেদের পেজ থেকে লাইভ সম্প্রচার করা হয়। এতে এর সাথে যুক্ত কয়েকজন কথা বলেন।এতে ‘সূচনা হিজড়া’ পরিচয় দেয়া একজন বলেন, ‘দোকানপাট বন্ধ। আমরা এখন কী খাব? কোনো কালেকশন নাই। তাই আমরা টিভি খুলেছি। সাংবাদিক হয়েছি। আমরা ছোট ছোট সংবাদ তৈরি করব।’ফেসবুকে সম্প্রচারিত ওই লাইভ ভিডিওতে অনেকেই তাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উৎসাহমূলক মন্তব্য করেছেন।লিয়াকত হোসেন নামে একজন লিখেছেন- ‘নিজেদের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি মহৎ কাজে এগিয়ে চলো, শুভকামনা রইল আগামী দিনের পথ চলার।’হাফিজ বাসিত নামে আরেকজন লিখেছেন- ‘সমাজ আপনাদের অনেক অবহেলা করে। আমি চাই আপনারা নিজে থেকে কোনো একটা কিছু করেন। যাতে সমাজের বোঝা না হয়ে সমাজের মানুষের গৌরব হতে পারেন। অনেক বাধাবিপত্তি আসবে কিন্তু থেমে থাকবেন না। সত্যি তোমাদের জন্য অনেক মায়া হয়। তোমাদের জীবন যাপন নিয়ে ভাবি। আল্লাহ চাইলে কি করতে পারেন। তোমাদের জীবন যাত্রার মান আরও উন্নত হোক এই দোয়াই করি। শুভ কামনা রইল।’ওই ভিডিওর কমেন্টে আমিনুর রহমান নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন- ‘সবাই এখানে লাইক কমেন্ট এবং শেয়ার করেন। ওদের আয়- রোজগার বাড়লে সমাজের উপকার হবে।’সিলেটে সম্প্রতি ফেসবুক পেজ খুলে তাকে টিভি চ্যানেল নাম দিয়ে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে দাবি করার প্রবণতা বেড়েছে। এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে। ‘ফেসবুক টিভি’র কারণে পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে নিজেরা বিপাকে পড়ার কথাও জানিয়েছেন অনেকে।সম্প্রতি কাগজপত্রবিহীন মোটরসাইকেল আটকের পর ফেসবুকে লাইভ করে ব্যাপক সমালোচিত হন ‘পিকে টিভি’ নামে একটি ফেসবুক পেজের ‘সম্পাদক’ ফয়ছল কাদির। দুদিন পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে সিলেটে ‘ফেসবুক টিভি’ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এর মধ্যেই চালু হলো- ‘সিলেট হিজড়া টিভি’।ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সিলেটের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান রিপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে পেজ খুলেই অনেকে টিভি নাম দিয়ে দিচ্ছেন। কথা বলতে পারেন না, সাংবাদিকতার নীতিনৈতিকতা জানেন না- তারাও ফেসবুকের কল্যাণে টিভির মালিক-সম্পাদক হয়ে যাচ্ছেন। যা মূলধারার গণমাধ্যমের জন্যও বড় হুমকি। তারা অনেক সময় ভুল তথ্য প্রচার করছেন। যা রাষ্ট্র এবং সাংবাদিকতার জন্যও ক্ষতিকর।‘আমি মনে করি, সরকারের এই বিষয়ে একটি নীতিমালা করা প্রয়োজন। যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কেউ গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে নিজেকে জাহির করতে না পারে।’‘সিলেট হিজড়া টিভি’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার মানুষের প্রতি আমাদের যথেষ্ট সহানুভূতি আছে। আমরা চাই তারা সমাজের মূল স্রোতে আসবেন। মূল ধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে তারা যুক্ত হবেন। সেখানে আরও বেশি বেশি নিজেদের অধিকার ও বঞ্চনার কথা বলবেন।’

এ বিভাগের আরো খবর