হিল জুতা পরে নারী সেনা কর্মকর্তাদের কুচকাওয়াজের একটি ছবি প্রকাশ করে ব্যাপক সমালোচনায় পড়েছে ইউক্রেনের সরকার।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আগামী মাসে ৩০তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে ইউক্রেন। সে জন্য এক বর্ণাঢ্য সামরিক কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী।
এই প্রস্তুতিরই কিছু ছবি শুক্রবার প্রকাশ করে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এগুলোর কয়েকটিতে দেখা যায়, ক্লান্ত-বিধ্বস্ত নারী সেনারা কুচকাওয়াজ করছেন উঁচু হিল জুতো পরে।
ক্যাডেট ইভানা মেদভিদের উদ্ধৃতি দিয়ে এ বিষয়ে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট আর্মিয়াইনফর্মে লেখা হয়, ‘আজ প্রথমবার হিল জুতায় প্রশিক্ষণ হচ্ছে। সাধারণ সামরিক বুট জুতার তুলনায় হিল পরে কুচকাওয়াজ করা বেশ কঠিন। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি।’
বিষয়টি নিয়ে পার্লামেন্টে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কোর ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা।
ছবিতে নারী সেনারা যে ধরনের হিল পরেছেন, সেই একই ধরনের কয়েক জোড়া জুতা পার্লামেন্টে নিয়ে আসেন তারা। প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেন এসব জুতার এক জোড়া পরে কুচকাওয়াজে অংশ নিতে।
গলোস পার্টির সদস্য ইনা সোভসান হিল জুতা পরার স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা আর ক্ষতিকর চিন্তা কল্পনা করাও কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের পুরুষ সেনাদের মতোই নারী সেনারাও জীবন বাজি রেখে বাহিনীতে যোগ দেন। এ ধরনের তাচ্ছিল্য তাদের প্রাপ্য নয়।’
শিল্পসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর। ২০১৪ সাল থেকে অঞ্চলটিতে সংঘাতে প্রাণ গেছে ১৩ হাজারের বেশি মানুষের।
নারী সদস্যদের প্রতি এমন ‘অবমাননামূলক আচরণের’ জন্য সেনাবাহিনীর ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ডেপুটি স্পিকার ওলেনা কোন্দ্রাতিউক। এ ঘটনায় তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
কোন্দ্রাতিউক জানান, পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করেছে সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি নারী সেনা।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীতে বর্তমানে ৩১ হাজার নারী সেনা আছেন। এর মধ্যে কর্মকর্তা পর্যায়ে আছেন ৪ হাজার।
পার্লামেন্টের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের প্রতি এ আচরণ বিতর্কের ঝড় তুলেছে। অভিযোগ উঠেছে নারী সেনাদের প্রতি বৈষম্যের।
ফেসবুকে ভিতালি পোরৎনিকোভ নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এটি ইউক্রেনের শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যযুগীয় মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
‘হিল পরিয়ে কুচকাওয়াজ করানোর মতো অসম্মান কল্পনাতীত।’
আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী মারিয়া শাপরানোভা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে পুরুষতান্ত্রিক ও নারীবিদ্বেষী আচরণের অভিযোগ তোলেন।
তিনি লিখেন, ‘উঁচু হিল জুতা নারীদের প্রতি এক ধরনের ব্যাঙ্গাত্মক আচরণ, যা সৌন্দর্যের নামে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।’