কট্টর বিধিনিষেধ থেকে বের হতে চাইছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। শিক্ষা-সংস্কৃতি থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রেই দেশটি সেজন্য নিয়েছে মহাপরিকল্পনা। যাকে ‘ভিশন ২০৩০’ বলছে দেশটি।
সেই কট্টর দেশ থেকে বেরিয়ে এসে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জোর দিয়েছে সৌদি সরকার। বিশেষ করে নারীদের শিক্ষায় ও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে নানান সুবিধা দিচ্ছে।
বর্তমান অগ্রগতিতে নারীরা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে (এসটিইএম) পেশা বেছে নিচ্ছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকার নারীরা এই চারটি বিষয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এখনও সংখ্যালঘু হিসেবেই পরিচিত।
তা সত্ত্বেও সৌদি নারীরা সম্প্রতি তাদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে চারটি বিষয়কে পেশা হিসেবে বেশি বেছে নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে তারা সৌদি আরবের শিল্প খাতে আরও বেশি করে জেন্ডার ব্যালান্সড করতে শুরু করেছেন।
রাজান আলরাদাদ্দি আমালার একজন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ। তিনি সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ মেগাপ্রকল্পের একজন সহযোগী। লোহিত সাগরের উপকূল সংরক্ষণে পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত তিনি। তার সঙ্গে কাজ করছেন রুয়া মাহমুদ নামের আরেক নারী।
প্রকৌশল নিয়ে পড়ালেখায় জোর দিয়েছেন সৌদির নারীরা। ছবি: আরব নিউজ
আমালা বলেন, ‘অন্য অনেক প্রকৌশল শিক্ষার্থীর মতো আমিও গণিতে খুব ভালো ছিলাম এবং আমি সমস্যা সমাধান খুব ভালোবাসতাম।’
আমালা সম্প্রতি ডব্লিউএসপির সঙ্গে কাজও করছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে। তিনি জানান, আরও বিচিত্র ভবিষ্যতের জন্য প্রকৌশলকে রোল মডেল হিসেবে নেয়া দরকার।
আমালা বলেন, ‘আমি সৃজনশীল হিসেবেই বেড়ে উঠেছি, আমি বাড়িতে ছোটবেলায় অনেক কিছু ভেঙে আবার সেগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করতাম। আমার বাবা এসব কাজ দেখে বলতেন আমি ভালো প্রকৌশলী হব এবং আমাদের পরিবারে আমিই প্রথম নারী প্রকৌশলী।’
২৩ জুন আন্তর্জাতিক নারী প্রকৌশল দিবস পালন করা হয়েছে। সৌদি আরবে এর মূল প্রতিপাদ্য ছিল নারীদের প্রকৌশল শিক্ষায় জোর দেয়া। প্রকৌশলকে পেশা হিসেবে নিতে এবং এটাকেই মূল হিসেবে পেশা গড়ার দিকেও নজর দেয়া হচ্ছে।
আমালা ২০১৪ সালে স্কলারশিপ নিয়ে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশলে পড়াশোনা করেন।
বাইরের দেশে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে পেশা গড়ছেন সৌদি নারীরা। ছবি: আরব নিউজ
এরপর তিনি একজন নারী প্রকৌশলী হিসেবে নাসাতেও তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার সুযোগ পান। সেখানে প্যানেল আলোচক হিসেবে সমাজে নারী প্রকৌশলীদের বিভিন্ন বিষয় ও এটিকে পেশা হিসেবে নিতে আগ্রহী করে তুলতে বক্তব্য দেন।
আরব নিউজের প্রতেবেদনে বলা হয়, ইউনেস্কোর ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিসস্টিকসের ২০১৮ সালের হিসাবে মাত্র ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ নারী বিশ্বে গবেষক হিসেবে কাজ করছেন।
অন্যদিকে প্রকৌশল, ম্যানুফ্যাকচারিং ও কনস্ট্রাকশনে বিশ্বে মাত্র ৮ শতাংশ নারী কাজ করছেন।
এ ছাড়া প্রকৃতি বিজ্ঞান, গণিত ও পরিসংখ্যানে আরও কম মাত্র ৫ শতাংশ নারী কাজ করেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এই সংখ্যা কমে মাত্র ৩ শতাংশ।
মধ্যপ্রাচ্য এখন বেশির ভাগ নারীই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে (এসটিইএম) আগ্রাহী হচ্ছেন।
সৌদি আরবের ৩৮ শতাংশ নারী স্নাতকের মধ্যে ১৭ শতাংশ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত সেক্টরে কাজ করছেন।
এর আবার একটি বড় অংশ বিদেশে পড়াশোনা শেষে সৌদি আরবে ফিরে এসে তাদের পেশা হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকেই বেছে নিচ্ছেন।