গার্ড অব অনার থেকে নারীদেরকে বাদ দেয়ার সংসদীয় কমিটির সুপারিশ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যখন তুঙ্গে, ঠিক সে সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হলো একজন নারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে।
সেই কর্মকর্তা মারুফা সুলতানা খান হীরামনি একজন সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তিনি ঢাকার রমনা রাজস্ব সার্কেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
রোববার সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে প্রসিকিউটর মুক্তিযোদ্ধা জেয়াদ আল মালুমের মরদেহে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়। এর ব্যবস্থাপনায় ছিল ঢাকা জেলা প্রশাসন।
সম্প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানে নারী কর্মকর্তাদের বাদ দেয়ার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। গত ১৩ জুন সংসদ ভবনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে করা এই সুপারিশে তুমুল সমালোচনা তৈরি হয়।
আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় নারীবান্ধব বলে যে বক্তব্য এতদিন এসেছে, সেখানে সংসদীয় কমিটির এই অবস্থান জানায় বিস্ময়। সুপারিশটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটও করা হয়। বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানান নারী ইউএনওরাও।
তবে সরকার শেষ পর্যন্ত এই সুপারিশ গ্রহণ করেনি। গত ২৪ জুন মুক্তিযুদ্ধে বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এই বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি সেদিন বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে লিঙ্গ বৈষম্য করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা আমাদের সংবিধানের সংরক্ষণের জন্য শপথ নিয়েছি। কাজেই আমার এর বাইরে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।’
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কোনো মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হলে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করার বিধান চালু করে।
গার্ড অফ অনার দিতে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকেন জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। রাষ্ট্রীয় সম্মানের অংশ হিসেবে সরকারের প্রতিনিধি হয়ে মরদেহে ফুলের শ্রদ্ধাও জানান ওই সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা।
এই আয়োজনে নারী কর্মকর্তার উপস্থিতি নিয়ে কখনও কোনো বিতর্ক হয়েছে বলে গণমাধ্যমে আসেনি।
তার পরেও কেন এমন সুপারিশ-এমন প্রশ্নে সংসদীয় কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাহাজান খান বলেছিলেন, ‘এই প্রশ্ন আসছে ধর্মীয় অনুভূতি থেকে। কোনো কোনো জায়গা থেকে বলা হয়েছে, জানাজায় নারীরা অংশ নিতে পারেন না।’
‘গার্ড অফ অনার সাধারণত জানাজার সময় দেয়া হয়’ জানিয়ে স্থায়ী কমিটির সভাপতি বলেন, ‘এ জন্য এই ইয়েটা (সুপারিশ) আসছে। যদি গার্ড অব অনার জানাজার আগে দেয় বা পরে দেয়, তখন জানাজা থাকে না। সেইটা একটা জিনিস। আমরা দেখেছি, সব জায়গায় জানাজার সময় গার্ড অফ অনার দেয়। ওই জায়গায় ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়টি বিবেচনা করে এটা সুপারিশ করা হয়েছে।’
তবে এই সুপারিশের পর জানাজা আর গার্ড অব অনার যে এক নয়, এই বিষয়টি সামনে নিয়ে এসে জোরাল বক্তব্য রাখেন নারী ইউএনওরা।