২১৫ আদিবাসী শিশুর গণকবর আবিষ্কারের কয়েক সপ্তাহের মাথায় নতুন করে কয়েক শ অচিহ্নিত কবরের সন্ধান মিলেছে কানাডায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী সাসকাচোয়ানে আবিষ্কৃত হয়েছে এসব কবর। প্রদেশটিতে এ ধরনের কবর শনাক্তের ঘটনা এটাই প্রথম।
দেশটির একটি আদিবাসী গোষ্ঠী বুধবার জানায়, অনেক আগে আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহৃত একটি এলাকায় কবরগুলো আবিষ্কার হয়েছে। বিষয়টিকে ‘ভয়াবহ ও বেদনাদায়ক’ আখ্যা দিয়েছে গোষ্ঠীটি।
ফেডারেশন অফ সভরেইন ইনডিজেনাস নেশন্সের (এফএসআইএন) বিবৃতিতে বলা হয়, কানাডার সাম্প্রতিক ইতিহাসে একসঙ্গে এত বেশি অচিহ্নিত কবর শনাক্তের ঘটনা এটাই প্রথম। তবে কতগুলো কবরের সন্ধান মিলেছে, সে সংখ্যা স্পষ্ট করা হয়নি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম লিডারপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সদ্য আবিষ্কৃত এসব কবরের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আদিবাসী গোষ্ঠী কাওয়েসেস ফার্স্ট নেশন।
যে স্কুল প্রাঙ্গণে এসব কবর শনাক্ত হয়েছে, সেটির নাম মেরিভ্যাল ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল। আবাসিক স্কুল হিসেবে সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হয় ১৮৯৯ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত।
একসময় স্কুলটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল রোমান ক্যাথলিক চার্চ।
নানা বিতর্কের মুখে ১৯৯৯ সালে স্কুলটি ভেঙে দিয়ে সেখানে অনাবাসিক একটি স্কুল চালু করা হয়। যদিও রয়ে গেছে গির্জা, ধর্মযাজক আর সমাধিস্থল।
এফএসআইএনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিদার বিয়ারও সত্তরের দশকে স্কুলটির শিক্ষার্থী ছিলেন। সে সময় সেখানে আদিবাসী শিশুদের ওপর ভয়াবহতার মাত্রা নিয়ে কিছু জানা ছিল না বলে জানান তিনি।
এখন নিমর্মতার খবরে স্তম্ভিত হিদার বিয়ার বলেন, ‘কে জানে কত শিশু নিখোঁজ হয়েছে, বাড়ি ফিরতে পারেনি। কোন ভাষায় এই নির্মমতার প্রতিক্রিয়া জানানো সম্ভব, জানি না।’
এর আগে মে মাসে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের কামলুপসে আদিবাসী শিশুদের একটি আবাসিক স্কুলপ্রাঙ্গণে অপ্রাপ্তবয়স্ক ২১৫ জনের দেহাবশেষের সন্ধান মেলে।
এরপরই কানাডায় আদিবাসীদের ওপর একসময়ের ঔপনিবেশিক বর্বরতার বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে।
১৮৩১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কানাডার আবাসিক শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল দেড় লাখ আদিবাসী শিশুকে। তাদের খেতে দেয়া হতো না; করা হতো শারীরিক ও যৌন নির্যাতন।
বিষয়টিকে ২০১৫ সালে ‘সাংস্কৃতিক জেনোসাইড’ আখ্যা দেয় কানাডার ট্রুথ অ্যান্ড রিকন্সিলিয়েশন কমিশন।
আদিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে এমন ব্যবস্থার জন্য ২০০৮ সালে ক্ষমা চেয়েছিল কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার।
কিন্তু এ ধরনের স্কুল পরিচালনা করত যে রোমান ক্যাথলিক চার্চ, তারা এখনও ক্ষমা চায়নি।
চলতি মাসের শুরুতে পোপ ফ্রান্সিস দুঃখ প্রকাশ করলেও তাতে মন গলেনি কানাডার ভুক্তভোগী আদিবাসীদের।