বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বীকৃতিহীন সন্তান নিয়ে বিপাকে মধ্যপ্রাচ্যফেরত নারী

  •    
  • ৯ জুন, ২০২১ ১৩:০৬

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক নারী ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব যান। সেখানে তিনি প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা জানান। একপর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হলে পুলিশের মাধ্যমে তাকে সফর জেলে পাঠানো হয়। সফর জেলেই জন্ম হয় শিশুর।

সৌদি আরবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের পর হওয়া ছয় মাসের ছেলেসন্তান নিয়ে মঙ্গলবার সকালে দেশে ফিরেন ৩২ বছরের এক নারী। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

ওই নারীর দাবি, সৌদি আরবে যে বাড়িতে কাজ করতেন সেই গৃহকর্তা তার সন্তানের বাবা। এখন ‘স্বীকৃতিহীন’ এই সন্তানকে নিয়ে কীভাবে নিজের বাড়িতে যাবেন বুঝতে পারছেন না।

২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এই নারী সৌদি আরব যান। তিনি জানান, দেশটিতে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হতেন। একপর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হলে পুলিশের মাধ্যমে তাকে সফর জেলে পাঠানো হয়।

সফর জেলেই জন্ম হয় শিশুটির। তার নাম রাখা হয় আব্দুর রহমান। ছয় মাসের সন্তানসহ তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ওই নারী বলেন, ‘আমার পরিবারের কেউ বিষয়টি জানে না। সন্তান নিয়ে আমি পরিবারে ফিরতে পারব না। সমাজের লোকেরা ভালোভাবে নিবে না।’

অসহায় নারী বিমানবন্দরে নেমেই কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বিষয়টি জানান বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কাছে। এরপর সেখান থেকে তাকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য হস্তান্তর করা হয় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কাছে। ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে তিনি আপাতত অবস্থান করছেন।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক। ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।

‘সৌদি আরবের কোন বাড়িতে তিনি কাজ করতে গিয়েছিলেন, তার নিয়োগকর্তা কে ছিলেন, এগুলো তদন্ত হওয়া উচিত। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করে সন্তানের পিতৃপরিচয় বের করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে আমরা একই ধরনের ১২টি ঘটনা দেখেছি। তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে আমাদের সোচ্চার হওয়া এবং নীতি নির্ধারকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন।’

সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ মার্চ সৌদি আরব থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে সন্তান দিয়ে দেশে ফিরেছেন নরসিংদী জেলার শাহনাজ আক্তার।

২৭ বছর বয়সী তরুণী ছিলেন অবিবাহিত। তিনি সৌদি আরবের মক্কার কেন্দ্রীয় জেলে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন।

এর আগে গত ২ এপ্রিল নিজের আট মাসের শিশু সন্তানকে বিমানবন্দরে ফেলেই চলে গেছেন সৌদিফেরত আরেক নারী। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তিনি সন্তান ফেলে যাওয়ার চেয়ে বিকল্প খুঁজে পাননি।

চার মাসের মেয়ে সন্তান নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ওমান থেকে দেশে ফিরতে বাধ্য হন আরেক নারী গৃহকর্মী। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি। সেখানে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ অফিসে গিয়ে ঘটনা জানান।

তার সন্তানের বাবা একজন ওমানি নাগরিক বলে দাবি করেন। ‘নির্যাতনের একপর্যায়ে’ তিনি অন্তঃসত্ত্বা হলে তাকে ওমান পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়। এরপর ওমান ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় তার সন্তানের জন্ম হয়।

এর আগেও ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওমান থেকে হবিগঞ্জ জেলার আরেক গৃহকর্মী তিন মাস বয়সী সন্তানসহ দেশে ফিরতে বাধ্য হন।

অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানসহ নারী গৃহকর্মীদের দেশে ফেরার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এমন পরিস্থিতির শিকার নারী ও তাদের সন্তানরা সমাজ ও পরিবারে অবহেলিত হয়ে বেড়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ব্র্যাকের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে এ ধরনের ১২ শিশুসহ নারীকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এখনও করা হচ্ছে।

বিদেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরা নারীদের হিসাব রাখছে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক।

সেখানকার হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথম ১০ মাসে সৌদি আরব থেকে দেশে ২২ জন নারী গৃহকর্মীর মরদেহ এসেছে। এদের সিংহভাগই হত্যার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

২০১৬ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৫০০ নারীর মরদেহ এসেছে। এদের মধ্যে ৮১ জনের আত্মহত্যার তথ্য রয়েছে। বাকিরা হত্যার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বিচার পায় না বলেও নানা সময় আলোচনা হয়েছে। গৃহকর্মী হিসেবে বিদেশে কাজ করতে গিয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি নারীর নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ আছে; প্রাণও হারিয়েছেন অনেকে।

অর্থ উপার্জনের আশায় গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফিরেছেন অনেক শ্রমিক। এসব ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর সংসারেও ফিরতে পারছেন না অনেক নারী। তাদের অনেকে সেফ হোমে অবস্থান করছেন।

এ বিভাগের আরো খবর