‘ছয় বছর আগে অবুঝ ছিলাম বলেই জঙ্গিবাদের সমর্থক হয়ে গিয়েছিলাম।’ এমনটি জানিয়েছেন আইএস-বধূ শামীমা বেগম।
বর্তমানে ২১ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘২০১৫ সালে যখন আমি যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে সরাসরি যোগ দিয়েছিলাম, তখন আমি ছোট ও সরল ছিলাম। তখন যা বিশ্বাস করেছিলাম, এখন আর সেসব জঙ্গিবাদে আমার আস্থা নেই। আইএস ধর্মের নামে যে সহিংসতা চালিয়েছিল, সেসব জানলে আমি কখনোই তাদের সমর্থন দিতাম না।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে শনিবার এমনটি উঠে এসেছে।
শামীমা আরও জানান, তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় গিয়েছিলেন মানবতার সেবা করতে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ঘনিষ্ঠ দুই বান্ধবী সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করে। আমি তখন একা হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাদের সঙ্গে সিরিয়ায় পাড়ি দিই। মানুষ ভাবে যে আমি আইএসের সব অপরাধ জেনেশুনে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, তাদের সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু এটা ঠিক নয়।’
তিনি জানান, জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অপরাধের জন্য তাকে দায়ী করাটা মানুষের আরেকটি বড় ভুল।
শামীমা আরও বলেন, ‘যখন ছোট ছিলাম, ভাবতাম আমিই সব বুঝি। এখন বুঝতে পেরেছি যে কতখানি ভুল করেছিলাম। তখন আমার মাকেও আমি ঘৃণা করতাম। এখন বুঝি যে তার কাছেই আমি সবচেয়ে নিরাপদ ছিলাম, তিনিই আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন, আর এখন আমিও তাকে ভালোবাসি।’
সিরিয়ায় তিন শিশুসন্তানের মৃত্যুর পর আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন এই আইএস-বধূ শামীমা বেগম। এখন যুক্তরাজ্যে ফিরতে ব্রিটিশ সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছেন তিনি। চাইছেন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আরেকটা সুযোগ।
সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে এই ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণী শামীমার জীবনের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণচিত্রে উঠে এসেছে তার এ আবেদন।
ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ২০১৯ সালে ধারণ করা প্রামাণ্যচিত্রে শামীমা বাঁচার জন্য ‘দ্বিতীয় সুযোগ’ চেয়েছেন। ‘তার সম্পর্কে আগে যা কিছুই জানা গেছে, সেসব ভুলে যাওয়ার’ অনুরোধ করেছেন তার দেশের মানুষকে।
২০১৫ সালে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দিতে দুই বান্ধবীকে নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় যান শামীমা। সেখানে গিয়ে বিয়ে করেন আইএসে যোগ দেয়া ধর্মান্তরিত এক ডাচ যুবককে।
তখন শামীমার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। এখন তিনি ২১ বছরের তরুণী। গত ছয় বছরে জীবনের নানা কদর্য রূপ দেখেছেন। যাদের সঙ্গে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি, সেই দুই বান্ধবী আমিরা আবাসি ও খাদিজা সুলতানার মৃত্যুর সাক্ষী হয়েছেন।
জঙ্গিদের পরাজয় আর ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের স্বঘোষিত খেলাফতের পতনের পর থেকেই দেশে ফেরার অনুমতি চাইছিলেন শামীমা।
২০১৯ সালে প্রথম সিরিয়ার এক আশ্রয়কেন্দ্রে শামীমার খোঁজ পান দ্য টাইমসের এক সাংবাদিক। আইএসের বর্বরতার মধ্যে থেকেও জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত হওয়ার জন্য কোনো অনুতাপ নেই বলে জানিয়েছিলেন ১৯ বছরের শামীমা।
সে বছরই জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সে সিদ্ধান্ত বহাল রেখে শামীমার দেশে ফেরার সুযোগ পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেয় দেশটির সর্বোচ্চ আদালতও।