অস্ট্রিয়ায় মসজিদসহ মুসলমানদের বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক স্থাপনার মানচিত্র প্রকাশের ঘটনায় তোপের মুখে পড়েছে দেশটির সরকার। সরকারের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে মুসলমানদের সংগঠন মুসলিম ইয়ুথ অস্ট্রিয়া।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুর্জের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করছে সংগঠনটি।
অস্ট্রিয়ার ইন্টিগ্রেশন মিনিস্টার সুজানে রাব ২৮ মে ‘ন্যাশনাল ম্যাপ অফ ইসলাম’ নামের একটি ওয়েবসাইট চালু করেন।
অস্ট্রিয়ায় অবস্থিত ৬২০টির বেশি মসজিদ, মুসলমানদের সমিতি, মুসলমান নেতা-কর্মকর্তাদের নাম, দেশ-বিদেশে তাদের সংগঠনের সম্ভাব্য শাখা-প্রশাখার নাম ও অবস্থান প্রকাশ করা হয় ওয়েবসাইটটিতে।
একে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ইসলামিক মানচিত্র’ আখ্যা দিয়েছে মুসলিম ইয়ুথ অস্ট্রিয়া।
শনিবার সংগঠনটির উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়, ‘মুসলমানদের সব প্রতিষ্ঠান এবং মুসলমানদের সঙ্গে যেকোনোভাবে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম, ঠিকানা ও কার্যাবলি প্রকাশ করার ঘটনা নজিরবিহীন। এর মাধ্যমে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে সরকার।’
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের ইসলামবিরোধী এমন পদক্ষেপের ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছেন অস্ট্রিয়ায় মুসলমানরা।
ভিয়েনাকে সতর্ক করে ইসলামিক রিলিজিয়াস কমিউনিটি ইন অস্ট্রিয়া- আইজিজিওই নামের একটি সংগঠন বলেছে, সরকারের এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে অস্ট্রিয়ার মুসলমানদের সমাজের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি হিসেবেও দেখানো হয়েছে তাদের।
এ পদক্ষেপে মুসলমানদের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলেও অভিযোগ আইজিজিওইর।
এই মানচিত্র প্রকাশের ঘটনায় সরকারের ভেতরেই চাপের মুখে পড়েছেন চ্যান্সেলর কুর্জ।
বিভেদ তৈরি হয়েছে কুর্জের রক্ষণশীল দল অস্ট্রিয়ান পিপলস পার্টি ও জোট সরকারের অপর দল অস্ট্রিয়ান গ্রিন পার্টির মধ্যে।
গ্রিন পার্টির মুখপাত্র ফাইকা আল-নাগাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে লিখেছেন, কুর্জ প্রশাসনের এই পদক্ষেপের সঙ্গে গ্রিন পার্টির কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততা ছিল না এবং তাদের কাউকে এ বিষয়ে কিছু জানানোও হয়নি।
এ ধরনের পদক্ষেপ একীভূত সমাজব্যবস্থার পরিপন্থি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অস্ট্রিয়া সরকারের এমন পদক্ষেপে উদ্বেগ জানিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলো।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘অস্ট্রিয়ায় সামাজিক সংহতি ও সবার অংশগ্রহণমূলক সমাজব্যবস্থার মধ্যে সরকারের এই পদক্ষেপ দেশটিতে জাতিবিদ্বেষ, বৈষম্য ও ইসলাম বিরোধের বিষ ঢুকিয়ে দিল।’
মুসলমান ও অভিবাসীদের পৃথক করে দেখানোর এই মানসিকতা পরিহার করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতেও ভিয়েনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আঙ্কারা।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জার্মানিও। ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির অন্যতম শীর্ষ ধর্মযাজক বিশপ মিখাইল শালুপকা।
ভিয়েনায় গত বছরের নভেম্বরে এক বন্দুকধারীর হামলায় চারজন নিহতের ঘটনার পর থেকেই চাপে রয়েছে অস্ট্রিয়ার মুসলমানরা।
হামলাকারী আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত ২০ বছরের তরুণ কুজতিম ফেজুল্লাই সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দেয়ার অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার এক বছরের মাথায় হামলা চালান তিনি। পুলিশের পাল্টা অভিযানে নিহত হন।
ওই ঘটনার পর থেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কঠোর হয় অস্ট্রিয়ার সরকার। শুধু নভেম্বরেই দেশজুড়ে ৬০টির বেশি অভিযান চালানো হয়েছিল মুসলমানদের বাড়িঘরে।
খ্রিষ্টান অধ্যুষিত অস্ট্রিয়ায় প্রায় আট লাখ মুসলমানের বাস, যা দেশটির মোট জনগোষ্ঠীর আট শতাংশ।