জন্ম থেকে হাত নেই নিলু আকতারের। জীবনের সংগ্রামটা তার অন্যদের চেয়ে বেশি। আর এই অবস্থাতেও মুরগির খামার দিয়ে প্রতিবেশীর রোষানলে পড়ার অভিযোগ উঠেছে।
নিলুর বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড মালিয়ারা গ্রামে। তার খামারের পাশে আরেকটি খামার আছে প্রতিবেশী আবু তৈয়বের।
স্থানীয় লোকজন সহমর্মী হয়ে নিলুর কাছ থেকে মুরগি কেনে বলে ভীষণ রাগ তৈয়বের। তার বিক্রি কম হয় বলে নিলুর খামারটি বন্ধ করে দিতে হুমকিধমকি দেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
কথা না শোনায় নিলু ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর গত ৩ এপ্রিল হামলা হয়। সুস্থ হয়ে ১২ এপ্রিল তৈয়ব ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় মামলা করেন নিলু।
হামলার পর পুলিশ কয়েকজনকে আটক করলেও মামলার আগেই তাদের ছেড়ে দেয়। পরে আর গ্রেপ্তার করেনি।
নিলুর অভিযোগ আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছেন। তাকে আবার চাপ দিচ্ছেন।
নিলুর সংগ্রামী জীবন
নিলুরা চার বোন। তার জন্ম এক হাত কাটা অবস্থাতেই। পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।
১০ বছর আগে পাশের মালিয়ারা সাতভাই পাড়ার কামাল উদ্দিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তবে বিয়ের পর থেকে বাপের বাড়িতে থাকেন নিলু। সেখানে মাকে নিয়ে বসবাস করার পাশাপাশি একটি পোলট্রি ফার্ম পরিচালনা করেন।
নিউজবাংলাকে নিলু বলেন, ‘আবু তৈয়ব আমার প্রতিবেশী। তারও পোলট্রি ফার্ম রয়েছে। লোকজন আমার কাছ থেকে মুরগি বেশি কেনে। এ জন্য তৈয়বের হিংসা হয়। সেটি তিনি মেনে নিতে পারছেন না।
‘আমাকে বলে, তুমি প্রতিবন্ধী এবং নারী। তোমার ইনকাম করার সুযোগ নাই। হাদিস-কোরআনে নারীর আয় করার সুযোগ নাই। ফতোয়া আছে। তুমি এসব বন্ধ করো। বাড়ির সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তুমি প্রতিবন্ধী। ভিক্ষা করো। আমার কাছ থেকে থালাবাসন নিয়ে যাও।’
নিলু বলেন, ‘আমি তার কথা শুনিনি। প্রতিবন্ধী হয়েও এক হাতে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেটি মেনে নিতে পারেননি তৈয়ব। তিনি প্রথমে আমাকে হুমকিধমকি দেন। এরপর আমি তার কথা না শোনাতে পরিকল্পিতভাবে হামলা করেন।’
তবে আবু তৈয়ব সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই মেয়ের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নাই। ধর্ম নিয়ে আমি কিছু বলিনি। তাদের সঙ্গে জায়গাজমি নিয়ে বিরোধ আছে। সেটি থেকে মাঝেমধ্যে ঝগড়া হয়। কিন্তু নিলু তার প্রতিবন্ধী হওয়া বিষয়টি কাজে লাগিয়ে আমার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
নিলুর মামলায় যা বলা হয়েছে
নিলুর মামলায় বলা হয়, তিনি কৃষি ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বাবার দেয়া জায়গায় দেড় হাজার শেডের একটি খামার দেন।
এরপর থেকেই প্রতিবেশী আবু তৈয়বের রোষানলের শিকার হন তিনি। তিনি খামারটি বন্ধের জন্য চাপ দেন। কিন্তু তিনি কথা শোনেননি।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নিলুকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন। তার সাত বছরের মেয়েকে অপহরণ করলে পুলিশ উদ্ধার করে এবং এ ব্যাপারে মামলা হয়।
এর জের গত ৩ এপ্রিল আবু তৈয়বসহ কয়েকজন নিলুর বাবার বাড়িতে ঢুকে কিরিচ দিয়ে নিলু ও তার মাকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে।
স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
নিলু আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মামলা করায় আবু তৈয়ব পুলিশের সহযোগিতায় আমার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেছে। আমার ওপর হামলাকারীরা এলাকায় বীরদর্পে ঘুরলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না।’
নিলুর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা
আবু তৈয়বও পাল্টা মামলা করেছেন নিলুর বিরুদ্ধে। এজাহারে বলা হয়েছে, নিলুর বাবার সঙ্গে তার জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। সেটিকে কেন্দ্র করে ৩ এপ্রিল নিলু ও তার পরিবারের সদস্যরা আবু তৈয়বের পরিবারের ওপর হামলা করে। এতে করে আবু তৈয়বের স্ত্রী নাজমা পারভীন আহত হন। প্রথমে তাকে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরপর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
পুলিশ যা বলছে
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, নিলুর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসআই আক্কাস। তিনি পটিয়া থানা থেকে বদলি হয়ে গেছেন। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘কাউন্টার মামলা আছে। দুই পক্ষই মামলা করেছে। তাই বিষয়টি জটিল হয়ে গেছে। আমরা তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’