যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর দুই দিন আগে সমাবেশ হয়েছে।
মিনিয়াপোলিসের হেনেপিন কাউন্টি গভর্মেন্ট সেন্টারের বাইরে স্থানীয় সময় রোববার সমাবেশ হয়।
ওই সেন্টারেই ফ্লয়েড হত্যায় অভিযুক্ত শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনের বিচারকাজ হয়েছিল।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশি হেফাজতে নিহত ফ্লয়েডকে স্মরণ এবং যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের সহিংসতা ও কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ভাইয়ের মৃত্যুর পর ব্রিজেট ফ্লয়েড ‘জর্জ ফ্লয়েড মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন।
ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘জবাবদিহি ও সংস্কারের পক্ষে আমাদের অব্যাহত আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। কারণ, ন্যায়বিচারের অধিকার শর্তসাপেক্ষ হতে পারে না বা ব্যক্তির গায়ের রঙের ওপরও নির্ভরশীল নয়।’
ফ্লয়েডের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর দিন মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বেশ কয়েকটি সমাবেশসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
নিহত ফ্লয়েডের পরিবার আয়োজিত রোববারের সমাবেশে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকারবিষয়ক আলোচিত নেতা রেভারেন্ড আল শার্পটন।
তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা শভিনের বিষয়ে আদালতের রায় সঠিক লক্ষ্যে এক পা অগ্রসর হওয়া। তবে এটি পদক্ষেপই। আমাদের আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
‘আমি আনন্দিত, আমরা সঠিক পথে রয়েছি। তবে আমাদের পথচলা জারি রাখতে হবে।’
গত মাসে তিন অভিযোগে অভিযুক্ত শভিনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয় আদালত। ওই রায়কে ‘এক ধাপ এগোনো’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
প্রেসিডেন্ট সে সময় বলেছিলেন, ‘‘‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না” এটাই ছিল জর্জ ফ্লয়েডের শেষ কথা। তার সঙ্গে তার উচ্চারিত শেষ শব্দগুলোকে আমরা মরতে দিতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বারবার ওই সব শব্দ শুনতে হবে। মুখ ফেরালে চলবে না। এটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মুহূর্ত হতে পারে।’
তবে ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর সমাজে কতটুকু পরিবর্তন এসেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অধিকারকর্মীসহ অন্যান্য মহল।
সমাবেশে অংশ নেয়া মিনিয়াপোলিসের বাসিন্দা জেমস শোলস বলেন, ‘সংবাদ প্রতিবেদনের দিকে চোখ গেলেই দেখা যায়, কোথাও না কোথাও কৃষ্ণাঙ্গরা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
‘হয় পুলিশ তাদের মারধর করছে নয়তো মেরেই ফেলছে। আক্রান্তরা নিরস্ত্র সে সময়। প্রত্যাশা অনুযায়ী ন্যায়বিচার পাচ্ছি না আমরা।’
গত বছরের ২৫ মে ৪৬ বছর বয়সী ফ্লয়েডকে জালটাকা ব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে মিনিয়াপোলিস পুলিশ। গ্রেপ্তারের সময় তাকে মাটিতে শুইয়ে ঘাড়ে প্রায় ৯ মিনিট চেপে বসেন শভিন।
ওই সময় বারবার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বলার পরও ওই পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড় থেকে নামেননি। একপর্যায়ে ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়।
ঘটনাটির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের হাজার হাজার মানুষ। শুরু হয় বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ, যা কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপেও।
ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তা শভিনসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে নিহত ব্যক্তির পরিবার।