দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদের সুরক্ষায় সাঁজোয়া ইসরায়েলি সেনাবহরের বিপরীতে নিরস্ত্র এক ফিলিস্তিনি নারী। গত সাত বছরে ২৮ বার তাকে কারাবন্দি করেছে ইসরায়েলি সেনারা।
হাতিস হুভেজ নামের এই নারী জানান, হয় তার মৃত্যু, না হয় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের মুক্তি। দুটির একটি ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত পবিত্র ভূমির সুরক্ষায় এভাবেই পাহারা দিয়ে যাবেন তিনি।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৪ বছর বয়সী হাতিস হুভেজ পেশায় কুরআনের শিক্ষক। ইসরায়েলি সেনাদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে মৃত্যুঝুঁকি জেনেও আল-আকসা প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছায় অবস্থান নিয়েছেন তিনি।
ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ থেকে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ রক্ষায় গঠিত ফিলিস্তিনি স্বেচ্ছাসেবক দল 'মুরাবিতসের' একজন হাতিস হুভেজ।
মসজিদ পাহারা দেয়ার কারণে তিনি এবং তার পরিবার অসংখ্যবার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হয়রানি, এমনকি বিচারের সম্মুখীনও হয়েছে।
হাতিস জানান, ২০১৪ সালে প্রথম আটক হন তিনি। প্রতিবার ইসরায়েলি সেনাদের নিগ্রহের সামনে কঠিন ছিলেন।
একবারই ভেঙে পড়েছিলেন তিনি, তখন কেঁদেছিলেন।
৪৪ বছর বয়সী হাতিস হুভেজ পেশায় কুরআনের শিক্ষক। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি
চার বছর আগের সেই স্মৃতি মনে করে হাতিস বলেন, ‘ইসরায়েলের একটি কারাগারে আটক ছিলাম। সেখানে প্রথম জোর করে আমার হিজাব ও ওভারকোট খুলে নিয়েছিল সেনারা।’
আল-আকসা মসজিদ বিষয়ক অভিযোগ আর সেখানে ইহুদি দখলদারদের প্রবেশের প্রতিবাদ করায় ২০১৭ সালে ২৩ দিন কারাবন্দি থাকতে হয়েছিল তাকে।
সম্প্রতি ইসরায়েলের বিভিন্ন দখলদার প্রতিষ্ঠানের করা মামলায় শেখ জারাহ এলাকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ শুরু হয়। এর জেরে চলতি মাসের শুরুতে সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভ করে ফিলিস্তিনিরা।
উত্তেজনা গড়ায় পবিত্র আল-আকসা মসজিদ পর্যন্ত। পবিত্র রমজান মাসজুড়ে সেখানে দফায় দফায় অভিযান চালায় ইসরায়েলি সেনারা। সংঘর্ষে আহত হয় কয়েক শ মুসল্লি।
এমন পরিস্থিতিতে উপত্যকায় ক্ষমতাসীন, স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস আল-আকসা থেকে সরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি হিসেবে ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোড়ে।
যার ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের পর গত প্রায় দুই সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষয়ী আক্রমণের শিকার হয় অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দারা। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের কাছে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে বিবেচিত হামাসের বিরুদ্ধে গাজা ও পশ্চিম তীরে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
১০ থেকে ২০ মে পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর এসব বিমান হামলায় প্রাণ গেছে ৬৫ শিশুসহ ২৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০০ জন নারী রয়েছেন। আহত দুই হাজারের বেশি। ভিটেমাটি হারিয়েছে এক লাখের বেশি মানুষ।
১১ দিনের সহিংসতার পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হলেও আল-আকসায় এরপরও অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।