নওগাঁর সাপাহারে শারীরিক পরিবর্তনে এক কিশোরী ছেলেতে পরিণত হচ্ছে এমন খবরে বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছে স্থানীয়রা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন হরমোনগত বা অন্য কোনো কারণে কৈশোরে যে কারও ক্ষেত্রে কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
১২ বছরের ওই কিশোরী স্থানীয় এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।
কিশোরীর পরিবার জানায়, দুই সপ্তাহ আগে তার শারীরিক ও কণ্ঠের কিছুটা পরিবর্তন ধরা পড়ে। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে বাড়ির সামনে ভিড় জমাতে শুরু করে স্থানীয়রা।
কিশোরীর মা বলেন, ‘মেয়ের শারীরিক গঠনে পরিবর্তন হলেও প্রথমে কিছুই মনে করিনি। অনেক দিন থেকেই এই বিষয়টি জানি। তবে লজ্জায় মুখ খুলতে পারিনি। এছাড়া এটা বেশি দিন সমাজে ঢেকে রাখাও যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘তার কথা ও গলার শব্দ দিন দিন ছেলের মতো হয়ে যাচ্ছে। তাই নিজেই প্রকাশ করলাম। নিজে চোখে দেখেছি মেয়ের শরীরে পরিবর্তন হচ্ছে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, ‘যারা হরমোন নিয়ে কাজ করেন তারা এ বিষয়ে সঠিক ধারণা দিতে পারবেন। উদ্বেগের কোনো কারণ থাকলে আমরা মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে মতামত দেয়ার চেষ্টা করব। অথবা মতামতের জন্য মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়ে দিব।’
তবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের গাইনি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. উম্মে নাজমিন ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে হয় বা মতামত জানাতে হয়।
‘যে শিশুটি ১২ বছর ধরে মেয়ে হিসেবে বেড়ে উঠেছে, আমরা ধরে নিতে পারি শারীরিক গঠনের দিক থেকে সে নারী। তার এখনকার পরিবর্তনের অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। হুট করে একটা মেয়ে ছেলে হয়ে যাচ্ছে বিষয়টি আসলে এমন নয়।’
ডা. নাজমিন ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের শরীরে নারী হরমোন ও পুরুষ হরমোন থাকে। যারা নারী, তাদের শরীরে নারীত্বের হরমোনের পরিমাণ ও প্রভাব বেশি থাকে। পুরুষের ক্ষেত্রেও পুরুষের হরমোন একই ভূমিকা রাখে।
‘কিছু কারণে মেয়েদের শরীরে ছেলেদের হরমোনের প্রভাব বেড়ে যেতে পারে। যেমন, কোনো টিউমার বা কোনো এনজাইমের পরিমাণগত পরিবর্তনের কারণে পুরুষত্বের প্রকাশ ঘটে এমন হরমোন সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ ধরনের ক্ষেত্রে গলার স্বর মোটা হয়ে যাওয়া, গোঁফ ওঠা কিংবা গঠনগত দিক থেকেও পুরুষালি কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। কোনো ওষুধের কারণেও এটা হতে পারে।’
ডা. নাজমিন ইসলাম বলেন, ‘এখানে আরেকটি বিষয় এখানে লক্ষ্যণীয়, ১২ বছরের ওই শিশুটি পুরষাঙ্গ নাকি নারী অঙ্গ বহন করছে সেটাও দেখা দরকার। কারণ এতদিনেও হয়ত বিষয়টি সেভাবে লক্ষ্যণীয় ছিল না। অথবা তার অভিভাবকরা হয়তো বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করেছেন।
‘আবার ওই শিশুটি ট্রান্সজেন্ডারও হয়ে থাকতে পারে। তাই ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া এমন ঘটনা কেন ঘটছে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যায় না।’