বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তরুণী আকাঙ্ক্ষাই কি জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব

  •    
  • ১৪ এপ্রিল, ২০২১ ১৬:২৫

জাতিসংঘের নবম মহাসচিব হিসেবে অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছরই। সব ঠিক থাকলে দশম মহাসচিব বাছাইয়ে নির্বাচন হবে অক্টোবরে। আকাঙ্ক্ষা জানান, তরুণ বলেই বিশ্বকে বদলে দিতে জাতিসংঘে নতুন ধ্যান-ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার ঘটাতে পারবেন তিনি।

জাতিসংঘে মাত্র চার বছর কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ আন্তসরকার জোটটির নেতৃত্বের লড়াইয়ে নেমেছেন আকাঙ্ক্ষা অরোরা। সফল হলে ৩৪ বছর বয়সী এ তরুণী জাতিসংঘের সর্বকনিষ্ঠ মহাসচিব হওয়ার পাশাপাশি হবেন সংস্থাটির প্রথম নারী প্রধান।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, জন্মসূত্রে ভারতীয় আকাঙ্ক্ষা ছয় বছর বয়সে চিকিৎসক মায়ের সঙ্গে সৌদি আরবে যান। সেখানে মা-বাবা ইংরেজি ভাষার একমাত্র আমেরিকান স্কুলে পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খাওয়ায় তিন বছরের মাথায় দেশে ফেরেন তিনি; ভর্তি হন একটি বোর্ডিং স্কুলে।

১৮ বছর বয়সে কানাডার টরন্টোতে ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন আকাঙ্ক্ষা। স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার পর কানাডায় শুরু করেন কর্মজীবন। প্রায় এক যুগ পর ২০১৬ সালে জাতিসংঘে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে।

জাতিসংঘে পা রাখার দুই বছরের মধ্যে অরোরার মনে হয়, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটির জন্ম, সেই উদ্দেশ্য দিন দিন ব্যর্থতার দিকে যাচ্ছে।

এরপর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে জাতিসংঘকে নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোতে শুরু করেন তিনি। তার মতে, সংস্থাটিকে নিজের মতো করে আমূল বদলাতে চাইলে মহাসচিব হওয়ার বিকল্প নেই।

আকাঙ্ক্ষা বলেন, ‘জাতিসংঘের বর্তমান ভূমিকা সাধারণ মানুষের জন্য অসম্মানজনক। যাদের জন্য এই প্রতিষ্ঠান, তাদের জন্যই কার্যকর কিছু আজ পর্যন্ত করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। সিদ্ধান্তহীনতা প্রতিষ্ঠানটির মূল সমস্যা নয়।

‘জাতিসংঘের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো মানবসেবায় অক্ষমতা। এ কাজে ব্যর্থতার জন্য সাধারণ মানুষের আস্থা; তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছি আমরা। এখন আর জাতিসংঘের কাছে তাদের কোনো প্রত্যাশাই নেই।’

মহাসচিব হওয়ার আকাঙ্ক্ষার নেপথ্যে

একটি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন আকাঙ্ক্ষা। সেখানেই জীবনের গুরুত্ব গভীরভাবে উপলব্ধি করেন তিনি।

আকাঙ্ক্ষা জানান, ট্যাক্সির আঘাতে পা ভাঙা আর সামান্য কিছু কাটাছেঁড়া ছাড়া তেমন কিছু হয়নি। কিন্তু সেদিন হয়তো মারাও যেতে পারতেন। শূন্য হাতে পৃথিবী ছাড়ার আগে কিছুই করে যেতে পারবেন না, এই চিন্তাতেই কাতর ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা আমাকে বাঁচিয়েছেন। এর তো কোনো কারণ আছে। কী সেই কারণ? নিজেকেই প্রশ্ন করেছিলাম, পৃথিবীর জন্য কী করেছি আমি?’

তখন থেকেই জীবন পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নেন আকাঙ্ক্ষা।

কূটনীতিতে অভিজ্ঞতা

কাগজে-কলমে আকাঙ্ক্ষার কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা খুবই কম। জাতিসংঘের বর্তমান প্রধান ৭১ বছর বয়সী মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের বয়স আকাঙ্ক্ষার প্রায় দ্বিগুণ। অভিজ্ঞতাতেও তার ধারেকাছে নেই আকাঙ্ক্ষা।

বয়স-অভিজ্ঞতায় এই পার্থক্য নিজেও স্বীকার করেন ৩৪ বছর বয়সী এ নারী। কিন্তু তিনি মনে করেন, কূটনীতি শুধু কনফারেন্স কক্ষ আর রাজনৈতিক বৈঠকে বসে শেখার বিষয় নয়।

তিনি বলেন, ‘শৈশব থেকে বিভিন্ন দেশে থাকতে থাকতে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়া, বোঝাপড়া, তাদের শ্রদ্ধা করতে পারাটাও কূটনীতিরই অংশ। দিন শেষে সব পার্থক্য মেনে নিয়েই মানুষকে ভালোবাসতে শেখা, বৈচিত্র্যকে ধারণ করা এবং সবাইকে শ্রদ্ধা করাটাই আসলে কূটনীতি, যে শিক্ষা আমি শৈশব থেকেই পেয়েছি।’

কী পরিবর্তন আনতে চান

বৈশ্বিক সব সমস্যা সমাধানের তালিকায় আকাঙ্ক্ষা শীর্ষে রেখেছেন শরণার্থী সংকটকে। জাতিসংঘকে তিনি দেখতে চান দেশহীন, ভিটেমাটিহীন শরণার্থীদের আশ্রয়স্থল ও অভিভাবক হিসেবে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা আট কোটির মতো। এদের মধ্যে সাড়ে চার কোটির বেশি মানুষ নিজ দেশেই ভাসমান জীবনযাপন করছেন। এ ছাড়া আড়াই কোটির বেশি শরণার্থী ১৮ বছরের কম বয়সী।

এ বিষয়ে আকাঙ্ক্ষা বলেন, ‘শরণার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া জাতিসংঘের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এক দশক ধরে নিজ দেশেই বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী বনে যাওয়া মানুষগুলোর জীবনে পরিবর্তন না আসার অর্থ জাতিসংঘের ব্যর্থতা। এটা ১০ বছরের লকডাউনের অভিশাপের মতো, যা চলছেই।’

এ ছাড়া জলবায়ু, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী অর্থনীতি পুনর্গঠনও রয়েছে আকাঙ্ক্ষার অগ্রাধিকার তালিকায়।

নারীর ক্ষমতায়ন

আকাঙ্ক্ষা মনে করেন, সারা বিশ্বের কল্যাণে দাঁড় করানো প্রতিষ্ঠানটিতেই এখনও নারীর ক্ষমতায়ন ঠিকভাবে হয়নি। সে শূন্যতা পূরণ করতে চান তিনি।

জাতিসংঘের ৭৬ বছরের ইতিহাসে মহাসচিব পদে কোনো নারী নিয়োগ পাননি। পাঁচ বছর আগে শেষ মহাসচিব বাছাইয়ের পর্বে ১৩ জন মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে সাতজনই ছিলেন নারী।

জাতিসংঘের বর্তমান উপপ্রধান পদে অবশ্য দায়িত্ব পালন করছেন নাইজেরিয়ার আমিনা মোহাম্মদ।

আকাঙ্ক্ষার মতে, এখনই সেরা সময় সংস্থাটির নারী নেতৃত্বের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করার।

আকাঙ্ক্ষা বলেন, ‘আমার প্রার্থিতা শুধু আমার সক্ষমতারই পরীক্ষা নয়, জাতিসংঘের সক্ষমতারও পরীক্ষা। সাত দশকে একজন নারীও নেতৃত্ব দেননি যে প্রতিষ্ঠানে, সেখানে কি আসলেই নারী-পুরুষের সমতার চর্চা আছে নাকি নারীর ক্ষমতায়ন নিছকই কয়েকটি শব্দ তাদের জন্য? কথার চেয়ে কাজের গুরুত্ব প্রমাণ করতে হবে জাতিসংঘকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সমতার জন্য নারীর লড়াই কঠিন। আরও কঠিন হলো অল্প বয়সী এক ব্যক্তির বুদ্ধির পরীক্ষায় দাঁড়ানো ও উৎরে যাওয়া।

জাতিসংঘের নবম মহাসচিব হিসেবে অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছরই। সব ঠিক থাকলে দশম মহাসচিব বাছাইয়ে নির্বাচন হবে অক্টোবরে।

আকাঙ্ক্ষা জানান, তরুণ বলেই বিশ্বকে বদলে দিতে জাতিসংঘে নতুন ধ্যান-ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার ঘটাতে পারবেন তিনি।

ইতিহাস বদলানোর এ লড়াই যে খুব একটা সহজ হবে না, তা জেনেই লক্ষ্য পূরণে কাজ শুরু করেছেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর