লিঙ্গ ও জেন্ডারের পার্থক্য নিয়ে চিকিৎসকদের বিভ্রান্তি চিকিৎসায় ত্রুটির কারণ হতে পারে। চিকিৎসকদের প্রতি এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন স্কটিশ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সেইন্ট অ্যান্ড্রুজ ইউনিভার্সিটির একদল মেডিক্যাল গবেষক বলছেন, প্রায় সময়ই চিকিৎসকরা লিঙ্গ ও জেন্ডারের পার্থক্য গুলিয়ে ফেলেন। এতে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসা অথবা চিকিৎসা অকার্যকর হয় বলে প্রমাণ মিলেছে।
শুক্রবার চিকিৎসাবিজ্ঞান সাময়িকী ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয় এ বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনটি।
এতে বলা হয়, সুষ্ঠু স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে লিঙ্গ ও জেন্ডারের পুঙ্খানুপুঙ্খ পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারা একজন চিকিৎসকের জন্য খুবই জরুরি। এতে ব্যর্থতা হৃদরোগ থেকে শুরু করে মাদকাসক্তিসহ সব ধরনের রোগীর চিকিৎসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
লিঙ্গ ও জেন্ডারের মধ্যকার পার্থক্যটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারণ করে দিয়েছে আগেই। সহজ সংজ্ঞায়, লিঙ্গ ব্যাপারটি জীববিজ্ঞান সম্পর্কিত; যার মাধ্যমে নারী-পুরুষের জৈবিক পার্থক্য তুলে ধরা হয়। অন্যদিকে, নারী ও পুরুষের সামাজিক পার্থক্য প্রসঙ্গে জেন্ডার শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
লিঙ্গ বা নারী-পুরুষের জৈবিক পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্যগুলো শারীরিক, সর্বজনীন, অপরিবর্তনীয় ও প্রাকৃতিক।
অন্যদিকে জেন্ডার অর্থাৎ নারী-পুরুষের ওপর সামাজিকভাবে আরোপিত পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক। ব্যক্তির সামাজিক দায়দায়িত্ব, আচরণ ও প্রত্যাশা জেন্ডার শব্দটির সঙ্গে সম্পৃক্ত; যা স্থান, কাল, সমাজ, সংস্কৃতিভেদে ভিন্ন, পরিবর্তনীয় এবং অনেক সময় ইতিহাসনির্ভরও হতে পারে।
স্কটিশ গবেষক দলটি বলছে, পার্থক্যটি অহরহ গুলিয়ে ফেলছেন চিকিৎসকরা। ফলে সাম্প্রতিক চিকিৎসা দেয়ার সময় লিঙ্গ ও জেন্ডার শব্দ দুটির একটিকে অন্যটির বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের চর্চা বেড়েছে।
সেইন্ট অ্যান্ড্রুজ ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ মেডিসিনের ড. মার্গারেট ম্যাককার্টেনি বলেন, ‘শুধু চিকিৎসকরাই নন, আমাদের সমাজে, এমনকি গবেষকদের মধ্যেও এই চর্চা বাড়ছে। দুটি বিষয়কে আলাদাভাবে শ্রেণিভুক্ত ও সঠিক ক্ষেত্রে এ দুটির ব্যবহার নিশ্চিত করা না হলে সামগ্রিকভাবে চিকিৎসায় ত্রুটি ও অকার্যকারিতার ঘটনা বাড়বে।’
কিন্তু দুটি শব্দের পার্থক্য নির্ধারণে ভুলের ফলে কেন সব ধরনের রোগীর চিকিৎসায় ত্রুটির ঝুঁকি বাড়ে?
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, লিঙ্গ ও জেন্ডার সমার্থক নয়। লিঙ্গের উল্লেখ মানেই এর সঙ্গে জীববিজ্ঞান, অর্থাৎ ব্যক্তির জননকোষ, ক্রোমোজোম, হরমোন ও প্রজনন অঙ্গ সম্পর্কিত। আর ব্যক্তির জেন্ডারের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তির মনস্তত্ত্ব, আচার-আচরণ, অঙ্গভঙ্গি, সামাজিকতাবোধ ইত্যাদি।
ফলে রোগীদের মধ্যে দুটি বিষয়ের পার্থক্য নির্ণয় করতে না পারলে চিকিৎসায় বড় ধরনের ফাঁক থেকে যেতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
লন্ডনের কিংস কলেজের নারী স্বাস্থ্য ও ধাত্রীবিদ্যার ইমেরিটাস অধ্যাপক সুজান বিউলি বলেন, ‘সব ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে এ পার্থক্য সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে না পারলে নিরাপদ ও কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা জটিল হয়ে যায়।’