নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সমতা আনয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও করোনাভাইরাস এ অগ্রযাত্রাকে অনেক বছর পিছিয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা এক প্রজন্ম।
জেনেভাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।
করোনায় পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি চাকরি হারানো, স্কুল বন্ধ থাকার সময় সন্তানদের বাড়তি খেয়াল, নারীদের ওপর সামঞ্জস্যহীন প্রভাবের মতো বিষয়গুলো বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে অসে।
ওইসব গবেষণা প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে ডব্লিউইএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনা নারীদের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তা এখনই নয়, দীর্ঘমেয়াদে বোঝা যাবে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ব্যাপক আকারে সংক্রমণের ঠিক আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ডব্লিউইএফ বলেছিল, ৯৯.৫ বছরের মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতায় পৌঁছানো যাবে।
তবে বুধবার ডব্লিউইএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, জেন্ডার সমতার ফল পেতে নারীদের আরও একটি প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হবে। আরও ১৩৫.৬ বছর লাগবে জেন্ডার বৈষম্য দূর করতে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ১৫৬টি দেশে নারী-পুরুষের অসমতা নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডব্লিউইএফ।
কর্মক্ষেত্রে সমতা ২৬৭ বছরে
ডব্লিউইএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৬৭.৬ বছরের আগে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা আসবে না।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার গবেষণা তুলে ধরে ডব্লিউইএফ, যেখানে বলা হয়, করোনায় পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি চাকরি হারিয়েছে। পাশাপাশি লকডাউনের কারণে তাদের গৃহস্থালি কাজ, সন্তানসেবা বেশি করতে হচ্ছে। এতে তাদের ওপর চাপ বাড়ছে, উৎপাদনের মাত্রা কমছে।
আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মক্ষেত্র খোলার পর পুরুষের চেয়ে নারীদের নিয়োগের হার কম ছিল।
ডব্লিউইএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিয়া জাহিদি বলেন, ‘কর্মস্থল ও বাড়ি উভয় ক্ষেত্রে জেন্ডার সমতায় মৌলিক প্রভাব ফেলেছে করোনা মহামারি। এর ফলে দীর্ঘদিনের অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছে। শক্তিশালী অর্থনীতি দাঁড় করাতে হলে আগামী দিনের চাকরিতে নারী নিয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
রাজনীতিতে জেন্ডার বৈষম্য ক্রমবর্ধমান
ডব্লিউইএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কয়েকটি বড় জনসংখ্যার দেশের রাজনীতিতে জেন্ডার বৈষম্য বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে পার্লামেন্টারি আসনে কেবল এক-তৃতীয়াংশের মতো নারী রয়েছে। মন্ত্রিসভায় তাদের প্রতিনিধিত্ব মাত্র ২২.৬ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে জেন্ডার বৈষম্য পুরোপুরি দূর করতে সাড়ে ১৪ বছর লাগবে।