বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভিক্ষা নয়, কাজ চান ময়মনসিংহের ট্রান্সজেন্ডাররা

  •    
  • ২৬ মার্চ, ২০২১ ১৩:০৭

‘আমাদের জীবনকাহিনি বলার কোনো জায়গা নেই। কিছু বলতে চাইলেই ভদ্রবেশী মানুষ ঘৃণায় সরে যায়। বাসা ভাড়া নিতে গেলে বাড়ির মালিক হিজড়া বলে বাসা দিতে চায় না। হোটেলে খেতে গেলে পাশ থেকে মানুষ উঠে যায়।’

জন্মের পর তারাও মাতৃস্নেহে বেড়ে ওঠেন। কিন্তু শৈশব পেরোনোর আগেই তাদের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ায় জেন্ডার পরিচয়। সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় অল্প বয়সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য হয় ট্রান্সজেন্ডাররা। এরপর রাস্তায়, গণপরিবহন কিংবা বাড়িতে গিয়ে চেয়েচিন্তে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের।

মেরিয়াম ওয়েবস্টার ডিকশনারি অনুযায়ী যাদের জন্মগত লিঙ্গের সঙ্গে জেন্ডার পরিচয় সাংঘর্ষিক তাদের ট্রান্সজেন্ডার বলা হয়।

তবে এমন জীবন চান না ট্রান্সজেন্ডারদের অনেকেই। ময়মনসিংহের হিজড়া সম্প্রদায়ের কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালেও উঠে এলো বিষয়টি।

জেলা শহরের সালমা, সমলা, রানী, রুবি, পিয়ারি, প্রিয়াঙ্কা, মমতা, শারমিন, হাসি, জোনাকী, মালা, কাজল, ময়ূরী, অন্তরা, দুলারী, লিপি, সুখীসহ অনেকেই তাদের জীবনের বেদনা ও সংগ্রামের কথা জানিয়েছেন নিউজবাংলাকে।

জীবনসংগ্রাম নিয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আমাদের জীবনকাহিনি বলার কোনো জায়গা নেই। কিছু বলতে চাইলেই ভদ্রবেশী মানুষ ঘৃণায় সরে যায়। বাসা ভাড়া নিতে গেলে বাড়ির মালিক হিজড়া বলে বাসা দিতে চায় না। হোটেলে খেতে গেলে পাশ থেকে মানুষ উঠে যায়।’

রাস্তায়, গণপরিবহন কিংবা বাড়িতে গিয়ে চেয়েচিন্তে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি বলেন, ‘গাড়িতে উঠলে যাত্রীর শরীরে শরীর লাগলে নাক সিটকায়। সিটে বসলে সাথে কেউ বসে না। যাত্রীরা ড্রাইভার-হেলপারদের গালিগালাজ করে হিজড়াদের কেন গাড়িতে উঠতে দিয়েছে। আমরাও তো মানুষ। তবে কেন আমাদের সাথে এমন আচরণ?’

ময়ূরী বলেন, ‘তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে ভরা জীবনে পেটের খিদা মেটাতে ভিক্ষা করি। সমাজ, রাষ্ট্র কেউ আমাদের প্রতি সহনশীল না।

‘এনজিও বা সংস্থা আমাদের নিয়ে কিছু কাজ করলেও সেটা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম।’

ময়মনসিংহের হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজন দলগতভাবে স্বল্প খরচের বাসা ভাড়া নিয়ে মাথাগুজে দিন কাটাচ্ছে। সংখ্যায় সীমিত কেউ কেউ আবার দলবদ্ধভাবে না থেকে ব্যক্তিগতভাবে কোনো একটি পেশায় যুক্ত হতে পেরেছে।নগরীর চায়না ব্রিজ মোড়ে পথচারীদের কাছ থেকে সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা হিজড়াদের একজন অন্তরা জানান, জন্মের পর বাবা-মায়ের স্নেহ-ভালোবাসায় পরিবারে ভালোই ছিল তার জীবন। কিন্তু যখনই তার ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠল, তখনই নেমে এলো বিপর্যয়।

তিনি জানান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তাকে বেছে নিতে হয়েছে ভাসমান জীবন। এখন অন্য হিজড়াদের সঙ্গে কষ্টে করতে হচ্ছে দিনাতিপাত।

মমতা জানান, বাইরের চেয়ে মনের ভেতরে অনেক বেশি কষ্ট। নানা সময় নানা অঙ্গভঙ্গি করে, নেচেগেয়ে, আনন্দ-উল্লাসের মধ্যে থেকে মনের কষ্ট চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করেন।

তিনি বলেন, ‘হিজড়ারা সুযোগ পেলে সব ধরনের কাজই করতে পারে। কিন্তু সমাজ আমাদের তেমন কোনো সুযোগ দেয় না। অনেকেই সামান্য সুযোগ পেয়ে হস্তশিল্পের কাজ করছে।’

সমলা বলেন, ‘ভিক্ষাবৃত্তি কার ভালো লাগে? জীবন চালাতে আজ আমরা এখানে। আমরা যদি কাজের সুযোগ পাই, তাহলে কি আমরা এমন পেশায় আসতাম?

‘দুই বেলা দুই মুঠো ভাত পেলেই আমাদের জীবন চলে। আমরা দুই মুঠো ভাতের কাজ চাই।’

২০১৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সরকার হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রিসভা তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতিবিষয়ক ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেটি প্রকাশ হয় ওই বছরেরই ২৬ জানুয়ারি।

এর ফলে হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজনের অন্যদের মতো শিক্ষা, চাকরি, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার সুযোগ সম্প্রসারণ হয়।

কিন্তু এই প্রজ্ঞাপনের পাঁচ বছর পরে এসেও হিজড়ারা কতটা সুবিধা পেয়েছেন, তা উঠে এসেছে সমলা কিংবা ময়ূরীদের কথায়।

ট্রান্সজেন্ডারদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সেবামূলক সংস্থা ‘বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’।

সংস্থাটির ময়মনসিংহ বিভাগীয় মিডিয়া কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান মাহমুদ কনিক বলেন, ‘সমাজ বাস্তবতায় হিজড়া সম্প্রদায় আসলেই এক চরম অবহেলিত গোষ্ঠী। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়ে সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছি আমরা।

‘সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায় থেকেই হিজড়াদের (ট্রান্সজেন্ডার) নানামুখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার। সমাজের পিছিয়ে পড়া সকল গোষ্ঠীকে দায়িত্বের সঙ্গে তাদের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসতে হবে।’

ময়মনসিংহ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক ওয়ালী উল্লাহ বলেন, ‘বর্তমান সরকার অবহেলিত সকল জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

‘আমরা তাদের একটা তালিকা তৈরি করেছি। সেখান থেকে তাদের বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ১০০ জনকে ড্রাইভিং, সেলাই, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আবার প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে অর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে। আগামীতে এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর