বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘নিজের শহরকে অচেনা লাগে’

  •    
  • ২৪ মার্চ, ২০২১ ১১:৫২

যুক্তরাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যেও এশীয়বিরোধী বর্ণবাদ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এমন বাস্তবতায় যুক্তরাজ্যে বসবাসরত পূর্ব এশীয় কয়েকজনের সঙ্গে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে কথা বলেন আল জাজিরার প্রতিবেদক। আলাপকালে তারা জীবন নিয়ে নানা ধরনের উদ্বেগের কথা জানান।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত বছর যুক্তরাজ্যে প্রথম লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এরপর দেশটিতে বসবাসরত পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষদের ওপর বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ ৩০০ শতাংশ বেড়ে যায়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ‘এন্ড দ্য ভাইরাস অফ রেসিজম’ এমনই তথ্য তুলে ধরেছে।

চীনের উহান শহরকে করোনার উৎপত্তিস্থল উল্লেখ করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হলে যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি চীনা রেস্তোরাঁ ভাঙচুর করা হয়। বেশ কয়েকটি শহরে সংখ্যাগরিষ্ঠ চীনাদের একঘরে করে রাখা হয়। এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষ রাস্তাঘাটে হামলারও শিকার হন।

করোনাভাইরাসকে ‘চীনা ভাইরাস’ হিসেবে অভিহিত করতে ছাড়েননি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। চীন বিশ্বজুড়ে এ মহামারি ছড়ায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বেশ কয়েকজন পর্যবেক্ষকের ভাষ্য, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় বন্দুকধারীর গুলিতে ছয় এশীয় নারীর মৃত্যু এ বার্তা দেয়, এশীয়দের জীবন কী পরিমাণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যেও এশীয়বিরোধী বর্ণবাদ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত পূর্ব এশীয় সম্প্রদায়ের কয়েকজনের সঙ্গে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে কথা বলেন আল জাজিরার প্রতিবেদক। আলাপকালে তারা জীবন নিয়ে নানা ধরনের উদ্বেগের কথা জানান।

আগের মতো নিরাপদ বোধ করি না: পেং

৩৭ বছর বয়সী পেং ওয়াং আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যে আসি। এর আগে ছয় বছর ফিনল্যান্ডে ছিলাম। প্রথম প্রথম এখানকার লোকজনের আচরণ ফিনল্যান্ডের মানুষের চেয়ে অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। তবে ব্রেক্সিট ও করোনা মহামারির পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।’

বর্ণবাদী আচরণ নিয়ে ওয়াং বলেন, ‘গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টার দিকে বাড়ির কাছে জগিং করছিলাম। ওই সময় রাস্তার অপর পাশে চলমান এক গাড়ির চালক চিৎকার করে আমাকে “চায়নিজ ভাইরাস” বলে।

‘আমিও পাল্টা চিৎকার করি। নিজেকে শান্ত করার পর আবার জগিং শুরু করি। অল্প কিছুদূর যাওয়ার পর গাড়িটি ফিরে আসে। আবার আমাকে চিৎকার করে কিছু বলে। আমি খুব ক্ষেপে যাই। গাড়ির কাছে গিয়ে বলি, “কেন এমন করছ? চলে যাও!” এরপর গাড়ির ভেতর থেকে চালকসহ আরও কয়েকজন বেরিয়ে এসে আমাকে পেটাতে শুরু থাকে। নিজেকে আর আগের মতো নিরাপদ লাগে না।’

করোনার আগে থেকেই এমন পরিস্থিতি: ব্রিটিশ এমপি

যুক্তরাজ্যের মধ্য-বামপন্থি লেবার পার্টির এমপি ৩৮ বছর বয়সী সারাহ ওয়েন বলেন, ‘এশীয়দের ওপর হামলা কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, যুক্তরাজ্যেও হচ্ছে। করোনা মহামারির আগে থেকেই নিশ্চিতভাবেই এখানে এ সমস্যা ছিল।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর করোনার সংক্রমণ শুরুর আগে টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘গুড মর্নিং ব্রিটেন’-এর ব্রডকাস্টার পিয়ার্স মরগান চীনা ভাষা নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করেন। একে স্বাভাবিক হিসেবেই ধরে নেয় অনেকে। মরগান ওই ঘটনা নিয়ে কখনো ক্ষমাও চাননি।

‘আমি মনে করি, এশীয়দের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত মনোভাব, কর্মকাণ্ড বা অপরাধ ঠেকাতে সরকার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। মাঝেমধ্যে তাদের উদ্দেশ্যে আবেগপূর্ণ কথা বলা হয়। যারা বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের শিকার বা যাদের দোকানপাটে হামলা হয়েছে, তারা ওই সব কথা শুনে স্বস্তিবোধ করেন। এর বেশি কিছু না।’

নিজের শহরকে অচেনা লাগে: লিসা

ভিয়েতনাম বংশোদ্ভূত ২৯ বছর বয়সী লিসা ড্যাং পেশায় রাঁধুনি। তিনি বলেন, ‘বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবা প্রায়ই বলতেন, “তোমাকে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, তুমি নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে বাস করছ।” বাবার সঙ্গে এ নিয়ে তর্কাতর্কি করতাম। তাকে বলতাম, “আমার জন্ম এ দেশে। আমি এখানকারই মানুষ।’”

লিসা বলেন, ‘আমার প্রতিবেশী নিঃসন্তান শ্বেতাঙ্গ দম্পতি। তারা আমাকে তাদের নাতি হিসেবে দত্তক নেন। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু মাধ্যমিকে পড়ার সময় হঠাৎ পরিবর্তন টের পাই। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আমাকে আক্রমণ করা শুরু হয়।

‘আমার নাম নিয়ে ঠাট্টা, কুকুর খাই এমন সব বর্ণবাদী মন্তব্য আমাকে শুনতে হয়। পরে একপর্যায়ে বর্ণবাদী মন্তব্য শোনা কমতে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর নিজেকে সত্যিকার অর্থেই লন্ডনেরই একজন মনে হতে থাকে। নিরাপদ বোধ করতে থাকি।’

করোনা শুরুর পরের পরিস্থিতি নিয়ে লিসা বলেন, ‘গত বছরের মার্চে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর আমার চীনা প্রেমিককে নিয়ে এসেক্স যাই শ্বেতাঙ্গ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে। মদের একটি দোকানে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে একজন আমাদের “উহান” বলে চিৎকার করে সম্ভাষণ জানায়। ওই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, সবকিছু থেমে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসেক্স লন্ডনের বাইরে। নানা বৈচিত্র্যের, সংস্কৃতির মানুষের বাস সেখানে কম। তাই ওই ঘটনাকে পরে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখি। কিন্তু গত নভেম্বরে লন্ডনের সুপারমার্কেটের একটি ঘটনা আমার ধারণা পাল্টে দেয়। সেখানে ২০ বছর বয়সী কয়েকজন তরুণ আমাকে বর্ণবাদী গালি দেয়। ওই তরুণরা আমার মতোই জাতিগত সংখ্যালঘু। এখানে পারস্পরিক সম্প্রীতি কোথায়?’

শৈশবের স্মৃতিচারণা করে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এ নারী বলেন, ‘এখন বুঝতে পারি বাবা আমাকে ছোটবেলায় কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। এ শহর আমাকে স্বাগত জানিয়েছে, এখন আর তা মনে হয় না। যে শহর আমার জন্মভূমি, তাকে আর নিজের মনে হয় না, অচেনা লাগে।’

এ বিভাগের আরো খবর