আফগানিস্তানে উগ্রবাদীদের হামলায় সাংবাদিক, বিচারক, মানবাধিকারকর্মীসহ সাধারণ জনগণ কিছুদিন পরপরই প্রাণ হারাচ্ছেন। হামলার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না নারীরাও। তবে এমন পরিস্থিতিতেও কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন নারী সাংবাদিকরা।
চলতি মাসের শুরুতে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর জালালাবাদে উগ্রবাদীদের হাতে মৃত্যু হয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনিকাসের চার কর্মীর।
কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন মালালা মাইওয়ান্দ, মুরসাল ওয়াহিদি, সাদিয়া সাদাত ও শাহনাজ রাউফি। তাদের ‘অপরাধ’ ছিল, ঘরের বাইরে কাজ করতে যাওয়া।
এনিকাস টিভি অ্যান্ড রেডিওতে কর্মরত ১০ নারীর মধ্যে এখন আছেন ছয়জন। নিহত চারজনের শূন্য ডেস্ক কেবল তাদের স্মৃতিই বয়ে বেড়াচ্ছে।মালালা এনিকাসে সংবাদ পাঠ করতেন। আর জালালাবাদের দর্শকদের জন্য টিভি নাটক পশতু ভাষায় ডাবিংয়ের কাজ করতেন মুরসাল, সাদিয়া ও শাহনাজ।
বিবিসির আফগান প্রতিনিধি সেকুন্দার কেরমানি এনিকাসের পরিচালক জালমে লতিফিকে প্রশ্ন করেন, ‘রেকর্ড করা ভিডিওতে মুরসাল, সাদিয়া ও শাহনাজের গলা শুনলে এখন কেমন বোধ হয়?’
জবাবে লতিফি বলেন, ‘খুব খারাপ লাগে আমাদের।’
তিনি বলেন, ‘এ লড়াই উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে দেশকে যারা নির্মাণ করতে চায় তাদের। উগ্রপন্থিরা চায়, নারীরা কেবল ঘরেই থাকবে; বাইরে নয়।’
বিবিসির সাংবাদিক কেরমানি জানান, উগ্রবাদীদের হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বড় অংশ নারী। ধারণা করা হচ্ছে, আফগানিস্তানের প্রগতিশীল ও উদারপন্থি মানুষের কণ্ঠরোধ করতেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে।
হামলায় নিহত সাদিয়ার মা সিমা বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা খুব দরিদ্র। তা সত্ত্বেও মেয়েকে পড়াশোনা করায় সাদিয়ার বাবা।
‘বড় হয়ে নিজের ও দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখত সাদিয়া। কিছুই হলো না। সাদিয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার স্বপ্নকেও কবর দেয়া হয়েছে।’
আফগানিস্তানে প্রাণঘাতী হামলার দায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জঙ্গি সংগঠন তালেবান স্বীকার করে। তবে জালালাবাদের ওই চার তরুণীর হত্যার দায় স্বীকার করেছিল আইএস।
এনিকাস রেডিওর এক সংগীত অনুষ্ঠানের প্রেজেন্টার হায়া হাবিবি ও নাদিয়া। কিন্তু চার সহকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় তাদের অনুষ্ঠান আর প্রচার হয় না।
আফগানিস্তানে ক্রমবর্ধমান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক নারী সাংবাদিক কাজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে হায়া কাজে ফেরার বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি ভীতিকর। জীবনের হুমকি ১০০ ভাগ সত্যি। ঘর থেকে বের হলে মনে হয়, নাও ফিরতে পারি। কিন্তু আমি থামব না। কাজের মাধ্যমে দেশের সেবা করব।’