বিশ্বখ্যাত মিসরীয় নারীবাদী লেখক ও অধিকারকর্মী নাওয়াল এল সাদাউয়ি আর নেই।
স্থানীয় সময় রোববার ৮৯ বছর বয়সে রাজধানী কায়রোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মুত্যু হয়।
সাদাউয়ির মেয়ে মোনা হেলমি আল জাজিরাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আরব বিশ্বে নারীর অধিকার নিয়ে সাড়াজাগানো এল সাদাউয়ি দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
মিসরের কাফির তাহলা গ্রামে ১৯৩১ সালে জন্ম হয় এল সাদাউয়ির। ১৯৭২ সালে উইম্যান অ্যান্ড সেক্স লিখে সুনাম কুড়ান তিনি। তবে তিন বছর পর ১৯৭৫ সালে উইম্যান অ্যাট পয়েন্ট জিরো উপন্যাস লিখে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছান সাদাউয়ি। বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ হয় তার বইটি।
৫৫টিরও বেশি বইয়ের রচয়িতা এল সাদাউয়িকে কারাবন্দি রেখেছিলেন মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত। দেশটির জগদ্বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনার মুখেও পড়েন তিনি।
মিসর সরকারের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের বিষয়ে এল সাদাউয়ি বলেছিলেন, ‘সাদাত আমাকে অন্য পুরুষ কয়েদির সঙ্গে বন্দি রাখেন। প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের দীর্ঘ শাসনামলে আমাকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়।
‘আমাকে নিষিদ্ধের আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশ ছিল না। তা সত্ত্বেও জাতীয় সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে পারতাম না। আমাদের মতো মানুষের কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই।’
নারীবাদ বিষয়ে বরাবরই স্বোচ্চার ছিলেন এল সাদাউয়ি। বহুগামিতা, নারীদের খতনাসহ বিতর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন তিনি। আরব অঞ্চলে তার রচনা সমালোচনার পাশাপাশি প্রশংসাও কুড়ায়।
এল সাদাউয়ি বলেছিলেন, ‘যখন নিজের সংস্কৃতির সমালোচনা করবেন, তখন অনেকে আপনার বিপক্ষে অবস্থান নেবে। তাদের ভাষ্য, নিজেদের বিষয় প্রকাশ্যে আলোচনা করো না।
‘আমি এ তত্ত্বে বিশ্বাসী নই। দেশের ভেতর বা বাইরে আমি আমার মতামত জানাবই। নিজের সঙ্গে অবশ্যই সৎ থাকা উচিত আমার।’
২০১১ সালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মিসরে গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেন এল সাদাউয়ি। ওই অভ্যুত্থানে পতন ঘটে প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের।
প্রচলিত ঘরানার বাইরে সমালোচনাধর্মী এল সাদাউয়ির বই বন্ধু গ্লোরিয়া স্টেইনেমসহ পশ্চিমা নারীবাদী অনেক লেখকের নজরে পড়ে।
এল সাদাউয়ি বলেন, ‘আমার কাছে নারীবাদের অর্থ পিতৃতন্ত্র ও শ্রেণির বিরুদ্ধে লড়াই। একই সঙ্গে পুরুষ ও শ্রেণি আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াইও।
‘শ্রেণি ও পুরুষতান্ত্রিক শোষণকে আমরা আলাদা করতে পারি না। সেই হিসেবে আমাদের মধ্যে নারীবাদী তেমন একটা দেখা যায় না।’
২০০৫ সালে বেলজিয়ামে ইনানা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পান এল সাদাউয়ি। পরের বছর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা কাউন্সিল অফ ইউরোপ তাকে নর্থ-সাউথ পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০২০ সালে বছরের ১০০ নারীর তালিকায় সাদাউয়ির নাম অন্তর্ভুক্ত করে টাইম ম্যাগাজিন।