জেন্ডারকেন্দ্রিক সহিংসতার মামলায় বিচারকদের গৎবাঁধা শব্দ ব্যবহার করে মন্তব্য করতে বা কোনো রায় দিতে নিষেধ করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট দেশটির সব আদালতকে বলেছে, তারা যেন বিচারকাজের সময় পোশাক, আচরণ, অতীত আচরণ, নৈতিকতা বা নারীর সতীত্ব সম্পর্কে মন্তব্য না করে।
একই সঙ্গে জেন্ডারকেন্দ্রিক সহিংসতা, হয়রানি ও ধর্ষণের মামলার সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় কোনো ধরনের ‘আপস ফর্মুলা’ না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
বিচারকাজে আদালতের এমন আচরণকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ মন্তব্য করে তা যেন কোনোভাবেই আর করা না হয় তা নিশ্চিত করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ এম খানওয়িলকার ও এস রবীন্দ্র ভাটের বেঞ্চ বলেছে, বিচারকরা সমাজের ক্ষতিকর সব ধারণা ভাঙতে এবং আইন ও তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
যৌন সহিংসতা বা হয়রানির মামলাগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে বিচারকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও জেন্ডার সংবেদনশীলতা নিয়ে সতর্ক থাকতে সুপ্রিম কোর্ট বিচারকদের একটি কোর্স করানোর কথাও বলেছে।
দেশটির মধ্য প্রদেশের আদালত ২০২০ সালের জুলাইয়ে বালির এক ঘটনার মামলায় একজন হেনস্তাকারীর জামিনের শর্ত হিসেবে অভিযোগকারীর হাতে রাখি পরানোর আদেশ দেয়। তারপর তার জামিন দেয়া হয়।
এমন বিষয়কে কেন্দ্র করেই সর্বোচ্চ আদালত নড়েচড়ে বসে। আদালত জেন্ডার সংবেদনশীল মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিচারকদের কী ধরনের ভূমিকা রাখা উচিত, তা-ও বলে দিয়েছে।
উচ্চ আদালত বলছে, জামিনের শর্ত হিসেবে রাখি পরানোর এই আদেশ একজন বিচারকের বিচারিক আদেশ। আর এমন একটি আদেশ পুরো বিচারব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখবে।
সুপ্রিম কোর্ট আদেশে বলছে, এটা কোনোভাবেই গ্র্রহণযোগ্য হতে পারে না। এমনকি সম্পূর্ণরূপে যৌন হয়রানির অপরাধকে উৎসাহ দেয়। আইন কোনোভাবেই এমন আদেশকে অনুমতি দেয় না। কেননা এমন হেনস্তার শিকার ব্যক্তিকে বারবার সেই আঘাত সহ্য করতে হয়। এমন গুরুতর অপরাধকে উৎসাহ দিয়ে হেনস্তার শিকার ব্যক্তিকে কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হয় এবং এমন আচরণ মেনে নিতে বাধ্য করা হয়।
জেন্ডারবিষয়ক মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দিয়ে এ সময় একটি চেকলিস্ট দেন বেঞ্চটির বিচারক রবীন্দ্র ভাট।
রায় লেখার সময় ও বিচার কাজ পরিচালনার সময় যে বিষয়গুলো বিচারকের অবশ্যই করা উচিত এবং যেসব শব্দ, বাক্য ও আচরণ অবশ্যই পরিহার করতে হবে এমন সব নির্দেশনা ওই চেকলিস্টে উল্লেখ করা হয়।
বিচার কাজের সময় হেনস্তার শিকার ব্যক্তি যেন কোনোভাবেই এমন কোনো আঘাত না পান, যাতে বিষয়টি তার জীবনে নেতিবাচক কিছু করে, এমন পরিস্থিতি এড়ানোর কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের ওই বিচারক।
হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছে, বিচারকাজে পোশাক, আচরণ, নৈতিকতা, কার্যকলাপ বা এমন কিছু নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তার আচরণ অন্যকে উৎসাহিত করে, এমন কোনো মনগড়া কথা বা তিনি পবিত্র বা অপবিত্র এমন কোনো শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকার কথা বলেছে বেঞ্চ।
বালির ঘটনায় দেয়া রায়ের কথা উল্লেখ করে উচ্চ আদালত বলেছে, এমন প্রচলিত ধারণাকে বিচারকাজে ব্যবহার করা ঠিক হবে না।
উচ্চ আদালতের এমন নির্দেশনামূলক আদেশের প্রসংশা করেছেন দেশটির প্রাক্তন বিচারকরা। তারা বলছেন, উচ্চ আদালতের এমন আদেশ বাস্তবায়ন হলে ভারতে যৌন হয়রানি অনেক কমে আসবে।