বৈচিত্র্যেই ঐক্য ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় নীতিবাক্য। তবে বাস্তবে এ নীতি কতটা মানা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির একটি মাধ্যমিক স্কুলের ২১ বছরের ছাত্রী উইয়িন।
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভা প্রদেশে বাস উইয়িনের। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সুন্দা উইউইতান পরিবারে জন্ম তার।
ঐতিহ্যবাহী সুন্দানিজ মানুষের ধর্ম সুন্দা উইউইতান। প্রকৃতির শক্তি ও পূর্বপুরুষের আত্মাকে এ ধর্মে বিশ্বাসীরা পূজা করেন।
উইয়িন বলেন, স্কুলে মাথা, গলা ও বুক আবৃত করে রাখা ঢোলা পোশাক জিলবাব না পরার কারণে ক্রমাগত চাপের মুখে তিনি। স্কুল থেকে ফিরে প্রায়ই কান্না করেন তিনি।
উইয়িন আল জাজিরাকে বলেন, “স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক একবার প্রধান শিক্ষকের অফিসে আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোমার ধর্ম কী?’, ‘তোমার ঈশ্বর কে?’, ‘তোমার পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কই?’”
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মশিক্ষার ক্লাসে শিক্ষক আমাকে হিজাব পরতে বলেন। এতে আত্মসম্মানে লাগে আমার। বিরতির সময় কখনো কখনো বন্ধুরা আমাকে কাফির (অমুসলমান) বলে।’
জিলবাব না পরলে পরীক্ষায় ফেইল গ্রেড দেয়া হবে বলেও এক শিক্ষক হুমকি দেন বলে জানান উইয়িন।
তিনি বলেন, ‘আমার স্কুলটি সরকারি। সব ধর্মের শিশুই এখানে পড়তে পারে।
‘কেউ যদি ধর্মীয় পোশাক না পরে, তাহলে তাকে তা পরতে বাধ্য করানো ঠিক নয়। এটা তাদের ব্যক্তিগত অধিকার। বৈচিত্র্যেই ঐক্য বলার মানে কী, যেখানে শিক্ষকরাই এর অর্থ বোঝেন না?’
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানায়, ইন্দোনেশিয়ার স্কুলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে ধর্মীয় পোশাক পরার বিষয়ে নারী ও শিশুদের ওপর চাপ আগের চেয়ে বেড়েছে, তা তারা যে ধর্মেরই অনুসারী হোন না কেন।
এদিকে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে ইন্দোনেশিয়ার সব সরকারি স্কুলে ধর্মীয় পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়। জানুয়ারিতে ১৬ বছর বয়সী এক খ্রিষ্টান শিক্ষার্থীকে স্কুলে হিজাব পরতে জোর করার খবর ভাইরাল হওয়ার পর ওই সিদ্ধান্ত নেয় ইন্দোনেশিয়া সরকার।