নারীদের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রতিবাদে দেশটির রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ, যাদের অধিকাংশই নারী। অনেক শহরে মিছিল-সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে তারা।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশটির পার্লামেন্টে যৌন নিপীড়নের সাম্প্রতিক অভিযোগের পর দেশজুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এসব প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া লোকজন দেশটিতে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ক্রিস্টিয়ান পোর্টারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়টি জানাজানি হয় এক সপ্তাহ আগে। তখন থেকেই শুরু হয় প্রতিবাদ।
পোর্টার ১৯৮৮ সালে ধর্ষণ করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে পোর্টার সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এরই মধ্যে সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ব্রিটানি হিগিনস ২০১৯ সালে এক মন্ত্রীর দপ্তরে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন গত মাসে। সেটিও মানুষের ক্ষোভ বাড়িয়েছে।
সোমবার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর উদ্দেশে হিগিনস বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় যেসব নারী যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা রয়েছে।
‘আমার গল্পটি একেবারে সামনে ছিল। এটা মনে পড়লেই আমার কষ্ট হয়। এটা আমাকে মনে করিয়ে দেয়, পার্লামেন্ট ভবনে এমন ঘটনা ঘটতে পারে এবং সত্যি বলতে, এমন ঘটনা যেকোনো জায়গায় ঘটতে পারে।’
প্রতিবাদে কী হচ্ছে?
প্রতিবাদটি পরিচিতি পেয়েছে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ বা ‘বিচারের জন্য সমাবেশ’ নামে। সোমবার দুপুর থেকে অস্ট্রেলিয়ার ৪০টি শহরে প্রতিবাদ হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা, প্রধান শহর সিডনি, মেলবোর্ন ছাড়াও দেশটির ছোট ছোট অনেক শহরে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে।
আয়োজকরা ধারণা করছেন, অস্ট্রেলিয়ায় নারীদের এটাই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ হতে যাচ্ছে।
নারীদের প্রতি যৌন সহিংসতার প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। ছবি: এএফপি
সোমবার শহরগুলোতে অনেক প্রতিবাদকারী কর্মস্থল ছেড়ে প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নেমে এসেছেন। মেলবোর্নে প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারীরা একটি বড় ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নামেন। ব্যানারে গত দশকে জেন্ডার সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত নারীদের নাম লেখা রয়েছে।
ক্যানবেরার র্যালিতে ৯০ হাজারের বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করে পার্লামেন্টে জেন্ডার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের ঘটনাগুলোকে বৃহত্তর জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
তারা একই সঙ্গে পোর্টারকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা তুলে নিয়েছে। কিন্তু অন্য অভিযোগকারীরা আলাদাভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চেয়েছেন।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া একজন বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। বলেন, “আমাদের খুত দ্রুত পরিবর্তন দরকার। ‘আমি অসুস্থ নারী’, এটা বিশ্বাস করতে পারি না।”
সরকার যা বলছে
অস্ট্রেলিয়ার প্রধামন্ত্রী স্কট মরিসন ঘটনার প্রতিবাদ করলেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। রোববার তিনি আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের পার্লামেন্ট ভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
কিন্তু প্রতিবাদকারীরা মরিসনের এমন আহ্বান প্রত্যাখান করেন। তারা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নারী মন্ত্রীদের তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে প্রতিবাদে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে সেখান থেকেই আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে বলে জানান।
প্রতিবাদকারীরা বলেছেন, তারা এখন একেবারে দরজার সামনে চলে এসেছেন। কিন্তু এখনো মন্ত্রিসভার কেউ তাদের কাছে যাচ্ছেন না। তারা কোনোভাবেই বন্ধ ঘরে বসে এর সমাধান চান না। তারা এর সমাধান চান ঘরের বাইরে।