বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেয়ে জন্ম দেয়ায় ঘর থেকে বিতাড়িত মা

  •    
  • ১১ মার্চ, ২০২১ ২৩:১৪

‘এক বছর আগে আমার বিয়ে হচে। বিয়ের কিছুদিন আমার বর আমার সাথে ভালো ব্যবহার করছে। তারপর যখন বেবি কনসেপ করছে; ওরা যখন বেবি টেস্ট করছে, তখন জানছে মেয়ে বাবু। এখন বলে মেয়ে নাকি ওদের না।’

ঘর আলো করে এসেছে এক কন্যা। কিন্তু বাবার মুখে রাজ্যের আঁধার।

ছেলেসন্তান জন্ম দিতে না পারায় গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে রোকসানা খাতুন নামে এক গৃহবধূকে চার দিনের নবজাতকসহ তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনার পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ নবজাতকসহ ওই মাকে উদ্ধার করে। এরপরেও স্বামীর ঘরে স্থান না পেয়ে বাবার বাড়িতে যেতে বাধ্য হয়েছেন গৃহবধূ রোকসানা খাতুন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোমামারা গ্রামের স্বামীর বাড়ির উঠান থেকে নবজাতক ও গৃহবধূকে উদ্ধার করে পুলিশ।

রোকসানার পরিবার জানায়, বছর দুয়েক আগে রোকসানার স্বামী প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন। এরপর সেই স্ত্রী তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যৌতুকের মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।

এক বছর আগে ঘোড়ামারা গ্রামের মহব্বর আলীর ছেলে রাজা মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ারকুড়া গ্রামের লুৎফর মিয়ার মেয়ে রোকসানা খাতুনের। আড়াই মাস আগে রাজা মিয়া ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে জানতে পারেন তিনি কন্যাসন্তানের বাবা হতে যাচ্ছেন।

এরপর থেকে স্ত্রীর ওপর চলে নির্যাতন। নানা ছুতা ধরে মারধর, কখনও যৌতুক চেয়ে নির্যাতন চলে আসছিল মেয়েটির ওপর।

গত ৮ মার্চ প্রসব বেদনা উঠলে রোকসানাকে নেয়া হয় সালেহীন ক্লিনিক নামে রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেয় কন্যাশিশু।

চারদিন সেখানে থেকে বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে দুপুরে স্বামীর বাড়ি ঘোড়ামারায় ফেরেন রোকসানা।

অভিযোগ রয়েছে, রোকসানাকে বাড়িতে ঢুকতেই দেয়া হয়নি। বাড়ির মূল ফটকে ঝুলিয়ে দেয়া হয় তালা। নবজাতকসহ সারাদিন বাড়ির উঠানে বসেছিলেন মা। পরে বিকেলে শ্বশুর ও শাশুড়ি তাকে সাফ জানিয়ে দেন, তিন মাস আগে তালাক দেয়া হয়েছে তাকে।

উপায়ান্তর না পেয়ে সন্ধ্যার দিকে ৯৯৯-এ কল দেন রোকসানা। ততক্ষণে কোলের নবজাতকটি অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে।

খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রোকসানা ও তার কন্যাসন্তানকে উদ্ধার করে। পরে তার শ্বশুরবাড়ির মূল গেটে তালা ও বাড়িতে কাউকে না পেয়ে পুলিশ তাকে সুন্দরগঞ্জের বাবার বাড়িতে পাঠায়।

রোকসানার খোঁজে সুন্দরগঞ্জের ধনিয়ারকুড়া গ্রামের বাবার বাড়িতে দেখা মেলে তার। তিনি বলেন, ‘এক বছর আগে আমার বিয়ে হচে। বিয়ের কিছুদিন আমার বর আমার সাথে ভালো ব্যবহার করছে। তারপর যখন বেবি কনসেপ করছে; ওরা যখন বেবি টেস্ট করছে, তখন জানছে মেয়ে বাবু। এখন বলে মেয়ে নাকি ওদের না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী আগে থেকে বলছিল; ছেলে বাবু হলে ও খুব খুশি হবে। পরে মেয়ে বাবু জন্ম হবে; এটা বোঝার পর থাকিই শ্বশুর-শাশুড়ি আর জা ওরা সবাই আমাকে নির্যাতন করছে। এক বেলা ভাত দিছে; আরেক বেলা দেয় নাই। এভাবে বিভিন্ন ভাবে টর্চারিং করছে আমার উপর।

‘রাজা (স্বামী) আমাকে ফোন দিয়ে তার ফুফুর সাথে রংপুর হাসপাতালে যেতে বলছে। চারদিন পর বাবু নিয়ে বাড়িত আসছি; বাড়ির মধ্যে আর উঠতে দেয় না। বলে যে, আমরা তোমাক ডিভোর্স দিয়ে দিছি। তখন আমি পুলিশক ফোন দেই। পুলিশ পরে ওখান থেকে আমাকে বাবার বাড়িতে রেখে গেছে।’

রোকসানা বলেন, ‘এই চারদিনের মেয়েকে নিয়ে আমি এখন কোথায় যাব? আমার বাবার বাড়িতেও তেমন কোন ভেসালিটি নাই (অর্থ সম্পদ)। আমি এখন কী করব একে (সন্তান) নিয়ে? কোথায় যাব? আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

রোকসানার মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘মেয়ে বাবু হবে তখন থেকে ওমরা (ওরা) অত্যাচার করে। চারদিন আগত অমপুরত (রংপুর) গেছি। সেটি মেয়ে বাচ্চা হচে। আজকে তামার বাড়িত গেছি; ওমনি আর ঘরত উঠপের দেয় না হামার বেটিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘অমপুরত হাসপাতালত ছোল হতে ২০ হাজার টেকা খরচ হচে। একটা টেকাও ওমরা দেয় নাই। হামরা গরিব মানুষ। হাওলাত-বাওলাদ করি টেকা দিছি।’

এসব অভিযোগ নিয়ে রোকসানার স্বামী রাজু মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

রোকসানার শ্বশুরের মোবাইল ফোন করলে তার স্ত্রী আছমা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাড়ির বউয়ের কাছে ঘনঘন বন্ধু আসে। বউয়ের চরিত্র খারাপ। তাই তাকে তিন মাস আগে তালাক দিছে আমার ছেলে।’

তিন মাস আগে তালাক দেয়া হলে এতদিন কীভাবে আপনার ছেলের বউ আপনার বাড়িতে অবস্থান করল। এমন প্রশ্নের জবাবে আছমা বেগম বলেন, ‘কিছু বলি নাই; পেটে বাচ্চা জন্যে। যদি কোন কিছু করে বসে।’

তবে গর্ভবতী অবস্থায় তালাক দেয়ার কোনো সুযোগ নেই আইনে।

সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা জানান, ‌‘পুলিশ পাঠিয়ে নবজাতকসহ রোকসানাকে উদ্ধার করে তার বাবার বাড়িতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর