চোখে আলো নেই, তবুও স্বপ্ন দেখেন বিশ্ব জয়ের। সেই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে চলছেন স্বমহিমায়। পৃথিবীর রূপ-রং না দেখলেও পেরিয়েছেন কঠিন বাস্তবতা, হয়েছেন জয়িতা।
গল্প হচ্ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রী মিফতাহুল জান্নাতকে নিয়ে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্রী।
সম্প্রতি মিফতাহুল শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে পেয়েছেন জয়িতা পুরস্কার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দেশসেরা জয়িতার সম্মাননা পান এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রী।
সোমবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে দেশসেরা জয়িতার সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান হয়।
মিফতাহুলের বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায়। সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা তার। কৃষক আবদুস সাত্তার ও নূর জাহান বেগম দম্পতির ৯ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ভাইবোনের মধ্যে তিন বোনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তার মতো বড় দুই বোন রেশমা খাতুন ও লাভলী খাতুনও জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।
২০১২ সালে বগুড়ার সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৪ নিয়ে এসএসসি পাস করেন মিফতাহুল। এরপর মানবিক বিভাগে বগুড়ার সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে ভর্তি হন। ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
এরপর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে ৪৪তম আবর্তনে।
পড়ালেখা কীভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন জানতে চাইলে মিফতাহুল বলেন, ‘কোনো দিন এক বেলা, কোনো কোনো দিন না খেয়ে থাকছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধীবান্ধব সংগঠনের ছাত্রকল্যাণ তহবিল থেকে পাওয়া এক হাজার টাকায় প্রথম বর্ষের পরীক্ষার ফি জমা দেই। পরবর্তী এক বছর প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সংগঠন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (পিডিএফ) প্রতি মাসে দেয়া এক হাজার টাকা শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে পড়ালেখা চালাই। মাঝে সম্মিলন ফাউন্ডেশনে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বইয়ের প্রুফ রিডার পদে খণ্ডকালীন কাজ করি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ, অর্থের অভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার না করতে পারায় চিন্তায় পড়ে যান মিফতাহুল। তবে দমে যাননি তিনি, বরং আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন, ইচ্ছা স্নাতকোত্তরেও করবেন একই ফলাফল।
আত্মপ্রত্যয়ী এই তরুণীর ইচ্ছা বিসিএস ক্যাডার হওয়া।