বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রতিকূলতা-জয়ের গল্প শোনালেন সুইটি

  •    
  • ৮ মার্চ, ২০২১ ১০:০৮

‘ব্যবসার শুরুর দিকে প্রতিবেশী ও পরিবারের লোকজন অনেকে হেয় করে কথা বলেছে... সেই সময়ে উৎসাহ বা সান্ত্বনা দেয়ার মতো কাউকে পাশে পাইনি ঠিকমতো... নিজের সুখকে বির্সজন দিয়ে সন্তানদের ভবিষৎ গড়তে এবং কারও কাছে যেন সাহায্যের হাত পাততে না হয়, সে জন্য পরিশ্রম করে এখন এ পর্যায়ে এসেছি।’

প্রায় সাত বছর আগে স্বামীর মৃত্যু; এরপর আর ঠাঁই হয়নি শ্বশুরবাড়িতে। আত্মসম্মান রক্ষায় যাননি বাবার বাড়িতেও। সেই থেকে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে একাই বন্ধুর পথে চলছেন নওগাঁর মেহের নিগার সুইটি।

শহরের প্রাণকেন্দ্র বসাক শপিং কমপ্লেক্সের ‘রাশেদ ব্যাগ হাউজ’ নামে দোকানটি সুইটির। এই ব্যাগ হাউজের যাত্রা অবশ্য স্বামী রাশেদের হাত ধরে। তার মৃত্যুর পর হাল ধরেন সুইটি। কর্ম-মেধা আর কঠোর পরিশ্রমে এগিয়ে নেন প্রতিষ্ঠানটি।

দোকানে গিয়ে কথা হলো অদম্য এই নারীর সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি শোনালেন জীবনযুদ্ধ-জয়ের গল্প।

সুইটির বাড়ি জেলা সদরের ভবানীপুর গ্রামে। ১৭ বছর বয়সে এদিক-ওদিক ছুটে বেড়ানো দুরন্ত কিশোরী সুইটির বিয়ে হয় রাশেদ রহমান খানের সঙ্গে। সংসারের ১৪ বছরের মাথায় মারা যান রাশেদ। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে শুরু হয় তার টিকে থাকার সংগ্রাম।

জেলা শহরের পুরাতন সোনালী ব্যাংক রোডের বসাক শপিং কমপ্লেক্সে স্বামীর বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘রাশেদ ব্যাগ হাউজ’ দোকানটি চালু করেন তিনি। এখন তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ৯ জন।

ওই দোকানের কর্মী শরিফুল ইসলাম ও সাব্বির হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, তারা এখানে প্রায় ছয় বছর ধরে কাজ করছেন। বেকারত্ব ঘুঁচেছে এখানে; সংসারও চালিয়ে নিচ্ছেন নির্বিঘ্নে।

সুইটির দোকানে আছে নিয়মিত কিছু গ্রাহক। ছবি: নিউজবাংলা

সুইটির দোকানের নিয়মিত গ্রাহক বিজিবি ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা মুনমুন চৌধুরী ও জান্নাতুন নাঈম। তারা জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর সুইটি যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, তা অন্য নারীদের জন্য অনুকরণীয়।

একা সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা কেমন, জানালেন সুইটি।

‘স্বামীর মৃত্যুর পর বিয়ে করিনি শুধু দুই সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে। তাদের উন্নত ও প্রতিষ্ঠিত জীবন উপহার দিতে নেমে পড়ি যুদ্ধে। স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়ি ছাড়া তেমন কিছুই নেই, যা দিয়ে সংসার চালাব। এমন অবস্থায় হঠ্যাৎ করে মাথায় এলো স্বামীর ব্যাগের ব্যবসার কথা।

‘রাশেদ মারা যাওয়ার পর তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রায় এক বছর বন্ধ ছিল। শুধু দোকানঘরের পজেশন নেয়া ছিল। তারপর আমার জমানো কিছু টাকা ও গয়না বিক্রি করে নতুন করে দোকানের যাত্রা শুরু করি।

‘বর্তমান আমার এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৯ জন কর্মচারী রয়েছেন। এখান থেকে উপজেলার বিভিন্ন শোরুমে পাইকাররা পণ্য কিনে নিয়ে যায় এবং খুচরাও বিক্রি করে থাকি। এ ছাড়া আমার দোকানের পণ্যের এখন চাহিদা অনেক বেশি। তবে এ ব্যবসাকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।’

ব্যবসার পরিসর আরও বাড়াতে চান সুইটি। ছবি: নিউজবাংলা

কষ্টের দিনগুলোয় পরিবারের কেউ পাশে দাঁড়ায়নি বলে জানান সুইটি। উল্টো সমাজ থেকে আসতে থাকে নানা চাপ।

‘ব্যবসার শুরুর দিকে প্রতিবেশী ও পরিবারের লোকজন অনেকে হেয় করে কথা বলেছে। স্বামী নাই, নতুন করে বিয়ে না করে ব্যবসা করছি, দোকানে বসছি, প্রতিদিন এগুলো নিয়ে চারপাশের সবাই কেমন জানি অন্য চোখে দেখত। এগুলো ভাবতে আমার খুবই খারাপ লাগত।

‘সেই সময়ে উৎসাহ বা সান্ত্বনা দেয়ার মতো কাউকে পাশে পাইনি ঠিকমতো। কত দিন, কত রাত নীরবে কেঁদেছি, কতটা অসহায়বোধ করেছি তা বলে বোঝাতে পারব না।

‘তবে আমার আশা-ভরসা ও নিঃসঙ্গ জীবনে দুই সন্তানই ছিল সুখ। নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়তে এবং কারও কাছে যেন সাহায্যের হাত পাততে না হয়, সে জন্য পরিশ্রম করে এখন এ পর্যায়ে এসেছি।’

সুইটি জানালেন, বড় মেয়ে রেজওয়ানা রহমান রিশা এখন নওগাঁ সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ছে। ছেলে গোলাম মোস্তফা রিফাত পড়ে নওগাঁ জিলা স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে।

সুইটি মনে করেন, বাংলাদেশের প্রান্তিক নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পেছনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা অর্থ ও দিকনির্দেশনার অভাব।

‘উদ্যোক্তা হতে গেলে কোন মাধ্যম থেকে পুঁজির ব্যবস্থা করা যাবে, সেটাই জানেন না অনেক নারী। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিলে টানতে হয় চড়া সুদ। সরকারিভাবে ঋণ-সেবার তথ্য ভালোভাবে সবার কাছে পৌঁছানো দরকার।’

শুধু অর্থের জোগান হলেই হবে না। পণ্যের সঠিক বাজারজাতের পদ্ধতিও জানতে হবে বলে মনে করেন সুইটি।

এ বিভাগের আরো খবর