বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শহীদ মিনারে মধ্যরাতে মনের আঁধার ভাঙার শপথ

  •    
  • ৮ মার্চ, ২০২১ ০২:০৪

মারজিয়া প্রভা বলেন, ‘আমরা আঁধার ভাঙার শপথ নিয়েছি। এই আঁধার ভাঙাটা আসলে রাতের আঁধার ভাঙা নয়। এটা আসলে মনের আঁধার ভাঙা। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা বা আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নারীর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতন রয়েছে। আমরা দেখেছি দিনের পর দিন ধর্ষণ মামলা আটকে থাকে। এ ছাড়া বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এই আঁধারটাকেই আমরা ভাঙতে চাই।’

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সোমবার রাতের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করেছে আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট নামের একটি সংগঠন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে গত বছর যেসব নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপরই নারী নির্যাতন বন্ধে ভূমিকা রাখতে শপথ নেন সংগঠনটির সদস্যরা।

এ শপথ অনলাইনে পরিচালনা করেন সংগঠনটির চেয়ারপারসন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। ‘আগুনের পরশমণি’ গান দিয়ে শেষ হয় তাদের এ আয়োজন।

‘করোনা বিশ্বে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করি ও সমতা অর্জনে নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করি’ স্লোগানে এই কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। এতে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ও আমরাই পারি জাতীয় কমিটির সদস্য এম বি আক্তার বলেন, ‘সারা দেশে প্রায় ৮০ শতাংশ উপজেলায় আমরাই পারি ক্যাম্পেইনের চেঞ্জমেকাররা আছেন। তারা শপথ নিচ্ছেন, “আমরা নিজেরা সচেতন থাকব, আমরা নির্যাতন করব না এবং অন্যকেও নির্যাতন থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করব।”’

আমরাই পারি জোটের প্রোগ্রাম অফিসার মারজিয়া প্রভা বলেন, ‘গত ১১ বছর আমরা এই কর্মসূচি পালন করে এসেছি। আমাদের প্রচুর জমায়েত হতো। তবে এ বছর করোনার কারণে ছাত্রছাত্রীরা না থাকায় সেভাবে জমায়েত হয়নি। করোনার বাস্তবতাকে মেনে আমরাই পারি জোটের সঙ্গে যারা যুক্ত আছি এবং আমাদের জাতীয় কমিটির কয়েকজন সদস্য এসে মোমবাতি প্রজ্বালন এবং শপথবাক্য পাঠ করি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আঁধার ভাঙার শপথ নিয়েছি। এই আঁধার ভাঙাটা আসলে রাতের আঁধার ভাঙা না। এটা আসলে মনের আঁধার ভাঙা। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা বা আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নারীর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতন রয়েছে। আমরা দেখেছি দিনের পর দিন ধর্ষণ মামলা আটকে থাকে। এ ছাড়া বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এই আঁধারটাকেই আমরা ভাঙতে চাই।’

আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, ‘রাজনৈতিক উন্নতি, অর্থনৈতিক উন্নতির পরেও নারীর অবস্থান প্রসঙ্গে আমরা দেখতে পাই অনেক উন্নত দেশেও নারী নির্যাতন পরিস্থিতি বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে। উন্নয়ন হলেও নারী নির্যাতন বন্ধ হয়ে যায় এর কোনো প্রমাণ আমরা দেখাতে পারিনি। এর মূল কারণ সংস্কৃতি।’

তিনি বলেন, ‘একটা সংস্কৃতি যেখানে নারী নির্যাতন হবে না, নারী নির্যাতন একটি অন্যায় অপরাধ বা সভ্যতার প্রতিকূল ব্যাপার সেটা আমরা ছোটবেলা থেকে মনের মধ্যে তৈরি করতে পারিনি। এ কারণে অনেক উন্নয়নের পরেও ঘরের ভেতর নারীর ওপর নির্যাতন ও বৈষম্য চলছে। দেখা যাচ্ছে, নারীর ক্ষমতায়নের সাথে আমরা সমতায়ন নিশ্চিত করতে পারিনি।’

১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের সুতা কারখানায় কর্মরত নারীশ্রমিকরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন। সেদিন বেতনবৈষম্য, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা আর কাজের বৈরী পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তারা একজোট হলে তাদের ওপর কারখানা মালিকরা আর মদতপুষ্ট প্রশাসন দমন-পীড়ন চালায়।

এর প্রায় অর্ধশতাব্দী পর ১৯০৮ সালে জার্মানিতে এ দিনটি স্মরণে প্রথম নারী সম্মেলন হয়। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে প্রায় ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে অংশ নেন।

এ সম্মেলনেই প্রথমবারের মতো প্রতিবছরের ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেয়া হয়। এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ নারী দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশে ১৯৭১ সাল থেকেই ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানানোর পর থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

এ বিভাগের আরো খবর