বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘এত একা যে হারিয়ে যেতে চাই’

  •    
  • ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১০:৫০

জাপানের আত্মহত্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মিচিকো উয়েদা বিবিসির এই সাংবাদিককে বলেন, ‘নারীদের আত্মহত্যার এ ধরন খুবই অস্বাভাবিক। গবেষক হিসেবে আমার পেশাজীবনে নারীদের আত্মহত্যা এভাবে বেড়ে যাওয়ার ঘটনা আগে কখনো দেখিনি।’

বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে জাপানে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেড়েছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে দেশটিতে আত্মহত্যার হার বাড়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন অনেকে।

দেশটিতে ১১ বছর পর ২০২০ সালে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার কিছুটা কমলেও নারীদের আত্মহত্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বাড়ে।

২০১৯ সালের অক্টোবরের চেয়ে ২০২০ সালের অক্টোবরে দেশটিতে নারীদের আত্মহত্যার হার ৭০ শতাংশেরও বেশি বাড়ে।

বিবিসির সাংবাদিক রুপার্ট উইংফিল্ড-হায়েস বলেন, ‘বারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া এক তরুণীর সঙ্গে দেখা করা যন্ত্রণাদায়ক এক অভিজ্ঞতা। যাই হোক, এর মাধ্যমে আত্মহত্যা রোধে যারা কাজ করছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নতুন করে কাজ করে আমার মধ্যে।’

রুপার্ট বলেন, ‘একদিন ইয়োকোহামা শহরের যৌনপল্লিতে কাজ করা বন্ড প্রজেক্ট নামের একটি আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থায় বসেছিলাম। টেবিলের ওপাশে নিস্তব্ধ অবস্থায় ছিলেন ১৯ বছর বয়সী এক তরুণী। শান্তভাবে কোনো আবেগ ছাড়াই ধীরে ধীরে নিজের গল্প বলা শুরু করেন তিনি।

‘১৫ বছর বয়স থেকে তরুণীটির বড় ভাই তার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করা শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। কিন্তু যন্ত্রণা ও একাকিত্ব থেকে মুক্তি মেলেনি তার। জীবনের ইতি টানাই একমাত্র রাস্তা বলে মনে হতে থাকে তরুণীটির।’

ওই তরুণী রুপার্টকে বলেন, ‘গত বছর এ সময় আমাকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। অনেকবার নিজেকে শেষ করার চেষ্টা করলেও পারিনি। আত্মহত্যার চিন্তা এখন ছেড়ে দিয়েছি বলে আমার ধারণা।’

বন্ড প্রজেক্ট তরুণীটিকে আত্মহত্যার চিন্তা থেকে বের করে আনতে বড় ভূমিকা পালন করে বলে প্রতিবেদনে জানান রুপার্ট। সংস্থাটি ওই তরুণীকে নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করে। একই সঙ্গে তাকে পরামর্শ দেয়াও শুরু করে।

বন্ড প্রজেক্টের প্রতিষ্ঠাতা ৪০ বছর বয়সী জুন তাচিবানা বলেন, ‘মেয়েরা যখন সংকট ও যন্ত্রণার মধ্যে থাকে, তখন আসলে কী করা উচিত, তা তারা ভেবে পায় না। আমরা তাদের কথা শুনি। তাদের জানাই, আমরা তোমাদের পাশে আছি।’

তাচিবানা বলেন, যেসব নারী আগে থেকেই ঝুঁকির কিনারায় ছিলেন, তাদের যেন করোনা পরিস্থিতি পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা কয়েকজন নারীর কাছ থেকে মর্মভেদী ফোনকল পান বলেও জানান তাচিবানা।

তিনি বলেন, ‘আমি মরতে চাই’, “আমার যাওয়ার জায়গা নেই” এসব আমাদের অনেকবার গত কয়েক মাসে শুনতে হয়েছে। ফোনে তারা বলেন, “আমি এত একা যে হারিয়ে যেতে চাই।’”

যেসব নারী শারীরিক বা যৌন হয়রানির মতো যন্ত্রণায় ছিলেন, করোনা তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করেছে বলে মনে করেন তাচিবানা।

তিনি বলেন, ‘এক মেয়ে একদিন আমাকে জানায়, তার বাবা তাকে ক্রমাগত যৌন হয়রানি করছে। আমার ধারণা, করোনায় তার বাবার হাতে তেমন একটা কাজ না থাকা এবং বেশির ভাগ সময় ঘরে থাকায় তিনি এ কাজ করছেন।’

জাপানের আত্মহত্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মিচিকো উয়েদা বিবিসির এই সাংবাদিককে বলেন, ‘নারীদের আত্মহত্যার এ ধরন খুবই অস্বাভাবিক। গবেষক হিসেবে আমার পেশাজীবনে নারীদের আত্মহত্যা এভাবে বেড়ে যাওয়ার ঘটনা আগে কখনো দেখিনি।

‘পর্যটন, খুচরা ও খাদ্য শিল্পেই মূলত নারীরা বেশি কাজ করেন। করোনায় এসব খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

তিনি বলেন, ‘অনেক নারীই এখন আর বিয়ে করছেন না। জীবনধারণের ব্যয় মেটাতে তারা পুরোপুরি নিজেদের ওপর নির্ভরশীল। তাদের কারও চাকরি স্থায়ী না।

‘কিছু হলে খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা ভেঙে পড়েন। গত আট মাসে এ কারণে অস্থায়ী কর্মজীবী নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি।’

এ বিভাগের আরো খবর