নেদারল্যান্ডসে ইন্ডি মেলিঙ্ক নামে মনোবিজ্ঞানের এক ছাত্রী গত বছর ভাইবোনদের কার্ড খেলার নিয়ম শেখাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ তার মনে উঁকি দেয় এই প্রশ্ন- ‘রানীর চেয়ে রাজার মূল্য কেন বেশি?’
বাবার অনুপ্রেরণা পেয়ে শখের ডিজাইনার মেলিঙ্ক সিদ্ধান্ত নেন, কার্ড খেলায় নারীর চেয়ে পুরুষকে বেশি মূল্য দেয়ার শতাব্দী পুরনো লৈঙ্গিক বৈষম্য ভাঙার এখনই সময়।
একের পর এক ডিজাইন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত লৈঙ্গিক বৈষম্যহীন কার্ড তৈরি করে ফেলেন মেলিঙ্ক। তার তৈরি কার্ডে কোনো রাজা, রানী বা জোকার নেই। তাহলে কী আছে?
মেলিঙ্ক উইয়ন টিভিকে বলেন, “আমি লিঙ্গ নিরপেক্ষ অবয়বহীন কার্ড তৈরি করেছি। এতে ‘কে’ বর্ণের জায়গায় লেখা হয়েছে ‘জি’, রানীর বদলে ‘এস’ ও জোকারের জায়গায় ‘বি’ লেখা হয়েছে। জি, এস ও বি এর অর্থ যথাক্রমে গোল্ড, সিলভার ও ব্রোঞ্জ।
‘এ বিষয়ে আমি আমার বাবা-মা ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছি। কার্ড ডিজাইন করতে ভালো লেগেছে। লৈঙ্গিক বৈষম্য নিয়ে আমি সচেতনতা সৃষ্টি করতে চাই। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এ বৈষম্য এখনও কীভাবে প্রভাব ফেলে, সে বিষয়ে মানুষকে জানাতে চাই।’
মেলিঙ্কের গোল্ড বার, সিলভার কয়েন ও ব্রোঞ্জ শিল্ড ছবি সম্বলিত কার্ডের প্রথম ৫০টি প্যাকেট নিয়ে নেয় তার পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরাই। পরে অনলাইনে নিজের উদ্ভাবিত কার্ড বিক্রি শুরু করেন তিনি।
কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার প্যাকেট কার্ড বিক্রি হয়েছে। বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র থেকেও কার্ডের অর্ডার পাচ্ছেন মেলিঙ্ক।
অবশ্য ডাচ ব্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা মেলিঙ্কের সৃষ্টি নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন।
অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর জেনারেল বেরিট ভ্যান ডোবেনবার্গ বলেন, ‘লৈঙ্গিক নিরপেক্ষতার দিকে আমরা নজর দিয়েছি, এটা ভালো। তবে রানীর চেয়ে রাজা ক্ষমতাবান- এ বিষয়টি কার্ড খেলার সময় কতজন মানুষের মাথায় থাকে, এ নিয়ে ভাবার আছে।’
অ্যাসোসিয়েশনের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হ্যান্স কেলডার বলেন, ‘৩৬ বছর ধরে আমি ব্রিজ খেলছি। কখনও মনে হয়নি, কোনো নারী বা জোকার নিজেকে কম মূল্যবান মনে করেছেন।’