সামাজিক সংস্কারের অংশ হিসেবে এবার আদালতগুলোতে দ্রুত নারী বিচারক নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব সরকার।
আল-আরাবিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বিষয়টি জানান দেশটির মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক দপ্তরের নারী ক্ষমতায়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিন্দ আল-জাহিদ।
তিনি বলেন, ‘বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেতে সাধারণত কাউকে অনেক কঠিন ধাপ পার হয়ে আসতে হয়। আমি যেটা বলতে পারি, খুব দ্রুতই একজন সৌদি নারীকে বিচারকের পদ গ্রহণ করতে দেখা যাবে। এ বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত হওয়ার পর থেকেই সৌদি আরবকে আধুনিকায়ন করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে সাহসী কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি সরকার।
সৌদি আরবকে কট্টরপন্থা থেকে বের করে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যুবরাজ সালমান। নারীদের ওপর থেকে কঠোর অনেক বিধিনিষেধও তুলে নিয়েছেন তিনি।
এর ফলে সৌদি নারীরা এখন স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখার সুযোগের পাশাপাশি গাড়ি চালাতে পারে। এমনকি যেতে পারছে সিনেমা হলেও।
বিদেশ ভ্রমণেও নারীদের সঙ্গে স্বামী বা পরিবারের পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি থাকার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়েছে।
নারীদের বিষয়ে সবচেয়ে বড় যে সিদ্ধান্তটি এসেছে, সেটি হচ্ছে বোরকা পরা এখন আর বাধ্যতামূলক নেই। সৌদি আরবে এখন হরহামেশা পশ্চিমা ধাঁচে জিন্স ও টপস পরা নারী দেখা যায়। এ নিয়ে যে দেশটিতে খুব একটা হাঙ্গামা হয়েছে, এমনও নয়। এটাই প্রমাণ করে, সৌদি নাগরিকরা তাদের এই পরিবর্তনকে বেশ সাদরে গ্রহণ করেছে।
বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পর এখন নিজে গাড়ি চালাতে কোনো সমস্যা নেই সৌদি আরবের নারীদের।
আল-জাহিদ জানালেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়টিতে জোর নজর দিচ্ছে সৌদি সরকার। সৌদি আরবে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সূচকগুলোতেও প্রমাণিত হয়েছে।
মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক দপ্তরের নারী ক্ষমতায়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জানালেন, সৌদি আরবের শ্রম বাজারে নারীদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৫ সাল নাগাদ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ২৫ শতাংশ তোলার লক্ষ্য ছিল তাদের।
আল-জাহিদ বলেন, ‘নারীদের অংশগ্রহণের হার এখন পৌঁছেছে ৩১ শতাংশে। এটা বিশাল উন্নতি। সরকারি চাকরিতে সৌদি নারীদের অংশগ্রহণ ৩৯ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ শতাংশ। তাদের অধিকাংশই শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও এ ধরনের খাতগুলোতে জড়িত।’
২০১৭ সাল থেকে সৌদি আরবে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করায় নানা উদ্যোগ নেয়ার পর গেল বছরে দেশটির অর্থনীতিতে নারীর অবদান ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। বিশ্ব ব্যাংকের ‘উইমেন, বিজনেস অ্যান্ড দ্য ল ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমনটাই উঠে আসে।
১৯০টি দেশের ওপর করা এই প্রতিবেদনে ৭০ দশমিক ছয় পয়েন্ট নিয়ে সবচেয়ে বেশি উন্নতি দেখিয়েছে সৌদি আরব। আগের বছর থেকে পয়েন্ট বেড়েছে ৩১ দশমিক আট পয়েন্ট।