উত্তরপূর্ব দিল্লিতে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরকে জোর করে অস্ত্রপোচারের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করানো হয়েছে। এরপর তাকে কয়েক বছর ধরে ধর্ষণ ও নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় দুই জনকে আটকের কথা জানিয়েছে শহরটির নারী কমিশন।
দিল্লি নারী কমিশনের (ডিসিডব্লিউ) ভাষ্য, তিন বছর আগে অভিযুক্তদের সঙ্গে লক্ষ্মীনগরে একটি নাচের অনুষ্ঠানে ওই কিশোরের পরিচয় হয়।
অভিযুক্তরা শুভমের (পরিবর্তীত নাম) সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ও তাকে নাচ শেখাবে বলে সঙ্গে নিয়ে যায়।
শুভম কিছুদিন কয়েকটি নাচের অনুষ্ঠান করে, অভিযুক্তরা তাকে কিছু টাকাও দেয়। কিছুদিন পর শুভমকে ওই দলের সঙ্গে থাকতে ও কাজ করার কথা বলা হয়।
শুভমকে নিয়মিত মাদক দেয়া হতো। কিছুদিনের মধ্যে জেন্ডার পরিবর্তনে তাকে জোর করে অস্ত্রপোচার করানো হয়। সে সময় শুভমের বয়স ছিল ১৩ বছর।
শুভম জানায়, পরিবর্তন দ্রুত করতে তাকে অস্ত্রোপচারের পর হরমোনের ওষুধ খাওয়ানো হতো।
ডিসিডব্লিউর বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্তরা শুভমকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। ক্রেতা হিসেবে যারা আসত, তারাও শুভমকে ধর্ষণ করত। তাকে বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যালে হিজড়া হিসেবে ভিক্ষা করতে পাঠানো হতো।
শুভম জানায়, অভিযুক্তরাও মেয়েদের মত পোশাক পরে হয়রানি করে মানুষের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিত।
কয়েকমাস পর শুভমের পরিচিত আরেক কিশোরকে রান্নার লোক হিসেবে নিয়ে আসে অভিযুক্তরা।
শুভমকে অভিযুক্তরা বাজারে পাঠালে সে চুরি করে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করলেও ভয়ে পুলিশকে কিছু জানায়নি।
গত বছর করোনাভাইরাসের কারণে মার্চের লকডাউন শেষ হলে শুভম ও তার বন্ধু পালিয়ে শুভমের মায়ের কাছে চলে যায়।
কিন্তু অভিযুক্তরা তাদের ঠিকানা খুঁজে পায়। গত বছরের ডিসেম্বরে সেই বাড়িতে গিয়ে শুভমের বাড়ির লোকজনকে মারধর করে ও তাদের জমানো টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সে দিনই অভিযুক্ত চার জন শুভম ও তার বন্ধুকে নিয়ে আসে ও ধর্ষণ করে।
ওই ঘটনার দুই দিন পর শুভম ও তার বন্ধু আবার পালিয়ে গিয়ে দিল্লি রেল স্টেশনে লুকিয়ে থাকে।
পরদিন এক আইনজীবী তাদের খুঁজে পায় ও ডিসিডব্লিউতে নিয়ে আসেন।
শুভম জানায়, মামলা করলে তাকেও জেলে যেতে হবে জানিয়ে কয়েক জন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে থানায় মামলা করতে বাধা দেয়।
ডিসিডব্লিউ দ্রুত সময়ে পদক্ষেপ নেয়। চাইল্ড সেক্স অ্যাবিউজ আইনের আওতায় ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট (এফআইআর) করে।
অভিযুক্ত চার জনের মধ্যে দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ডিসিডব্লিউ জানায়, তারা শুভম ও তার বন্ধুকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে এবং তাদের পুনর্বাসন ও সুরক্ষায় কাজ করছে।