ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রায় ‘অ্যানা সুই’ নামের একটি পার্লার চালান আইওয়ান। তিনি ট্রান্সজেন্ডার; দেশটির জনসংখ্যার অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ।
আগে এই পার্লারে চার ট্রান্সজেন্ডারকে কাজ দিয়েছিলেন আইওয়ান। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর শুধু এক জন কর্মীকে রাখার সামর্থ্য আছে তার।
‘আগে দিনে ১০-১৫ জন গ্রাহক পেতাম। এখন দুই সপ্তাহে হয়তো একজন আসেন। মার্চে বৈশ্বিক মহামারি শুরুর পর থেকে এমন হচ্ছে’, বলেন আইওয়ান।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে করোনা পরিস্থিতিতে সে দেশের ট্রান্সজেন্ডারদের দুর্ভোগের এ চিত্র।
ইন্দোনেশিয়ায় তাদের কাজের সুযোগ খুব কম। উত্তর সুমাত্রার মনোবিজ্ঞানী ইরনা মিনাউলি বলেন, এখনো সমাজের অনেকে হিজড়াদের স্বাভাবিকভাবে নেন না। তাদের কলঙ্ক মনে করে ধমকানো হয়। পার্লার এবং বিয়েকে ঘিরে গড়ে ওঠা ছোট পরিসরের শিল্প খাতেই মূলত তারা কাজ করতে পারেন।
আইওয়ান বলেন, ব্যবসার এই মন্দাবস্থায় কেবল এক জন কর্মীকেই তিনি রাখছেন। এমি নামের ওই কর্মী ১০ বছর ধরে তার সঙ্গে কাজ করছেন।
ভবনটি নিজের বলে ভাড়া দেয়া থেকে বেঁচে যাওয়ায় কোনো রকমে পার্লার খোলা রাখতে পারছেন আইওয়ান।
পার্লারটির একমাত্র কর্মী এমি। ছবি: আল জাজিরা
তিনি বলেন, ‘আমার কয়েক জন ট্রান্সজেন্ডার বন্ধু আছেন, যারা ভাড়া দিতে না পারায় নিজ নিজ পার্লার ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছেন। সব কর্মী ছাঁটাই করে দিয়েছেন কয়েক জন। কোনো গ্রাহক এলে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কর্মীদের ডেকে আনেন।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার মানুষ।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে মার্চ থেকে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২০ হাজারের বেশি মানুষের। আক্রান্ত হয় ছয় লাখ ৮৫ হাজারের বেশি।
এমন পরিস্থিতিতে পার্লারের মতো সেবায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও সামর্থ্য নেই বলে জানালেন আইওয়ান।
বিশ্বের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত দেশটির পনডোক পেসান্ত্রেন ওয়ারিয়া আল-ফাতাহ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা শিনতা রাত্রি বলেন, মহামারির কারণে ভুগছেন সে দেশের ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়।
‘করোনার কারণে তাদের আয় কমে গেছে ৬০ শতাংশ। বেশিরভাগই বাড়ি ভাড়া দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। শুধু খাবার জোগাড়ের মতো অর্থকড়ি আছে তাদের। এ কারণে তারা খুবই দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত।’
সেখানকার বেশিরভাগ ট্রান্সজেন্ডারের যথাযথ পরিচয়পত্র নেই। সমাজেও তারা গুরুত্ব পায় না। এসব কারণে সরকারি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইন্দোনেশিয়ার সরকারের দেয়া সহায়তার কিছুই পায়নি বলে জানান আইওয়ান ও তার একমাত্র কর্মী এমি। এমন অবস্থায় বছর শেষে আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত তারা।
‘পার্লার ব্যবসা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। এটিও যদি বন্ধ করে দিতে হয়, তাহলে কি করব?’, প্রশ্ন তাদের।