করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ‘অপরাধে’ প্রকাশ্যে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন চীনের এক নারী। যে ব্যক্তি ওই নারীর ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করেছেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে দেশটির সরকার।
ব্যবস্থার পরপরই হাসপাতালে ভর্তি ২০ বছরের ওই নারী আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। কেন তাকে আক্রমণ করা হয়েছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি সবেমাত্র করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। এরই মধ্যে আমি আক্রমণেরও শিকার।’
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ওই নারীর পদবি প্রকাশ করেছে। ঝাউ পদবির ওই নারীর বাড়ির ঠিকানা থেকে শুরু করে ফোন নম্বরসহ আরও বেশ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করা হয়।
ঝাউয়ের তথ্য প্রকাশকারী ২৪ বছর বয়সী ওয়াং কেন এ কাজ করেছেন, তা স্পষ্ট নয়।
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় চেংদু শহরের পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ওয়াংকে ‘প্রশাসনিক শাস্তি’ দেয়া হয়েছে।
বুধবার চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবোতে তারা লেখেন, ‘আইনের মাধ্যমে নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।’
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে অনলাইনে লাঞ্ছনা বন্ধে পুলিশের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, যার সাম্প্রতিক উদাহরণ ঝাউ।
মঙ্গলবার ঝাউয়ের দেহে করোনা শনাক্ত হওয়ার পরপরই স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কনটাক্ট ট্রেসিংয়ের জন্য শেষ দুই সপ্তাহে তার চলাচলের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে। এটি নিয়মমাফিক প্রক্রিয়া। এতে করোনা শনাক্তকারীর নাম প্রকাশ করা হয় না।
কিন্তু ঝাউয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি হয় অন্যরকম। দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কারণ শেষ দুই সপ্তাহে তিনি নখের সেলুন, বার ও বেশ কয়েকটি নাইটক্লাবে যান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী কয়েক জন জানান, এতে প্রমাণিত হয় ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ জীবনযাপন করেন ঝাউ। তিনি ‘বেপরোয়া’ ছিলেন বলেও মত দিয়েছেন কয়েক জন। ঝাউয়ের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে শহরজুড়ে করোনা ছড়ানোর অভিযোগও তোলা হয়।
এর পরপরই নামসহ ঝাউয়ের বিস্তারিত তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করেন ওয়াং। শুরু হয় ঝাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণের ঝড়।
জবাবে টাউশাও ওয়েবসাইটে বেশ কয়েকটি পোস্টে ব্যক্তিগত আক্রমণ বন্ধের অনুরোধ জানান ঝাউ।
তিনি বলেন, চাকরির অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি নাইটক্লাবে যান তিনি। এদের মধ্যে পরিবেশ তদারকি ও বারে বিক্রি অর্ন্তভুক্ত।
ঝাউ বলেন, ‘কেউই চান না, তাদের সঙ্গে এমনটা হোক।’
অপরিচিতদের কাছ থেকে হুমকিমূলক অসংখ্য ফোন কল ও টেক্সট মেসেজ পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
বুধবার সন্ধ্যায় ঝাউ জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন তিনি। অনলাইনে আক্রমণের ঘটনায় তিনি বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন বলে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা।
তবে অপরিচিতরা তাকে উৎসাহব্যঞ্জক টেক্সট মেসেজও পাঠাচ্ছেন বলে জানান ঝাউ।
চেংদুতে বেশ কয়েক মাস পর সোমবার ঝাউয়ের দাদা-দাদির দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এর আগে কফের চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তারা।