বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কক্সবাজারে পত্রিকার হকার ‘মাসি মা’

  •    
  • ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৬:০৯

স্বামীর মৃত্যুর পর হাসপাতালে নার্সের কাজ করতেন। অজ্ঞাত কারণে চলে যায় চাকরি। এরপর ছাত্র পড়িয়ে চালাতেন সংসার। সেটিও আর করা হয়নি। বড় ছেলে মারা যাওয়ার পর তার পত্রিকা বিক্রির ব্যবসা হাতে তুলে নেন। এক যুগ ধরে বিতরণ করে চলেছেন খবরের কাগজ।

সবাই তাকে ডাকে মাসি মা বলে। তিনি মোটামুটি সবার চেনা। এই তিনি হচ্ছেন শেফালী পাল। কক্সবাজার জেলার একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতা । এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন এই নারী।

১৯৫৫ সালে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাহ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের পালপাড়া গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম শেফালী পালের।

প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পা দেন পাঁচ বছর বয়সে। কিন্তু পরিবারের অভাব অনটনের কারণে পঞ্চম শ্রেণির পর আর এগোয়নি পড়ালেখা। তার বাবা পত্রিকা বিক্রি করে সংসার চালাতেন।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় রবীন্দ্র রুদ্রের সঙ্গে। বিয়ের পর ভালোই চলছিল সবকিছু। জন্ম নেয় ছেলে সন্তান। নাম রাখা হয় স্বপন পাল। শেফালির জীবনের সব স্বপ্ন ছিল একমাত্র সন্তান স্বপনকে ঘিরে।

বিয়ের পাঁচ বছর পর তার স্বামী কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথচ তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েন শেফালী। কী করে তিনি ছেলেকে বাঁচাবেন, কীভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয় তার।

তখন তার সহায়তায় এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী এক নারী। তার মাধ্যমে নার্সিং পেশায় যুক্ত হন শেফালী। একটি হাসপাতালে জুনিয়র নার্স হিসেবে যোগ দেন।

চার বছর পর এক অজানা কারণে তার চাকরি চলে যায়। তখন টিউশনি করে একমাত্র সন্তান স্বপন পালের শিক্ষা ও পরিবারের খরচ চালানো শুরু করেন।

এইচএসসি পড়া অবস্থায় শারীরিক অসুস্থতার কারণে পড়ালেখা ছেড়ে দেন স্বপন পাল। তিনি মায়ের অমতে বিয়ে করেন। শুরু করেন পত্রিকা বিক্রির কাজ। এর মধ্যে দুই সন্তানের বাবা হন। বড়টি ছেলে, ছোটটি মেয়ে। ভালোই চলছিল জীবন। হঠাৎ বাবার মতো কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন স্বপন পাল।

তখন শেফালী পাল ছেলের কাজটি নিজের কাঁধে তুলে নেন। শুরু করেন পত্রিকা বিক্রি।

২০০৮ সালের ২৫ অক্টোবর স্বপন পালও মারা যান। ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন শেফালী। কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে তাই পত্রিকা বিক্রির কাজটি আর ছাড়তে পারেননি।

টানা ১২ বছর ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন অফিস-আদালত, দোকানপাট ও ঘরে ঘরে গিয়ে সংবাদপত্র পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। পুরুষশাসিত সমাজে পত্রিকা বিক্রি করতে গিয়ে তিনি নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু তাতে দমে যাননি শেফালী।

নিজের আরাম আয়েশের দিকে না তাকিয়ে সার্বক্ষণিক ছেলের পরিবারের পাশে থাকছেন। প্রয়োজন মেটাচ্ছেন নাতি নাতনিদের। ৬৫ বছর বয়সেও জীবনযুদ্ধ থেমে নেই শেফালীর।

শেফালী পাল নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত পরিবারের পাশে থেকে সন্তানের দিয়ে যাওয়া কর্মে নিয়োজিত থাকবেন।

তিনি জানান, গত ২৯ নভেম্বর কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন তাকে একটি টমটম বা ইজিবাইক উপহার দিয়েছেন। তার পরিবারকে স্ব-নির্ভর করতেই জেলা প্রশাসকের এই উপহার। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক শেফালী পালের বড় নাতিকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

শেফালীর পুত্রবধূ জয় পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে আমার শাশুড়ি পরিবারের হাল ধরেন। এত অভাব অনটনে থাকার পরও সেটা আমাদেরকে বুঝতে দেননি। ৬৫ বছর বয়সেও জীবন যুদ্ধে হার না মানা একজন কঠোর পরিশ্রমী ও মহীয়সী নারী আমার শাশুড়ি।

এ বিভাগের আরো খবর