করোনাভাইরাস মহামারিতে লকডাউনের মধ্যে সঞ্চয় বাড়াতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকেছেন ভারতের অনেক নারী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বেশ কিছু নারীর গল্প তুলে ধরা হয়েছে। তাদের একজন ৩১ বছর বয়সী সাকিনা গান্ধী। তিনি কাজ করেন জনসংযোগে।
শেয়ারবাজারের চেয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে বরাবরই নিরাপদ ভেবে এসেছেন এ নারী। তাই মহামারি শুরুর আগ পর্যন্ত সেখানেই বিনিয়োগ করেন তিনি।
কিন্তু মার্চে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেয় ভারত সরকার। সে সময় সাকিনা শেয়ারবাজারে যাওয়ার চিন্তা করেন।
তিনি বলেন, ‘লকডাউনে শেয়ারবাজারের দিকে লক্ষ করার অবসর হাতে আসে। প্রথম ১৫ দিন আমি শুধু বাজারের গতিবিধির দিকে নজর দেই। পরে শেয়ারের তালিকা করি।
‘কী ধরনের অস্থিতিশীলতা এ ক্ষেত্রে কাজ করে, তা বিশ্লেষণ করি। কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপের পর সেসব শেয়ার কিনে ফেলি।’
একপর্যায়ে সাকিনার এই উদ্যোগ লাভজনক বিকল্প হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
লকডাউনে ভারতের অর্থনীতি ধাক্কা খাওয়ায় শেয়ার মূল্য পড়তির দিকে থাকে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের মনোভাব পরিবর্তন ও বিশ্বস্ত শেয়ারের বদৌলতে দ্রুত শেয়ার মূল্য বাড়তে শুরু করে।
কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার মূল্য যথেষ্ট পরিমাণে বাড়তে থাকে। করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়া ও টিকার আগমনী বার্তার কারণে শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।
ভারতে করোনার কারণে অনেকে চাকরিচ্যুত হন। নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধিসহ বেশ কিছু বিষয়ের কারণে দেশটির অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় শেয়ারবাজারে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতে সাকিনাই একমাত্র কর্মজীবী নারী নন, যিনি বাড়তি অর্থ উপার্জনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন।
পারিবারিক ঐতিহ্য থাকলেও রিকিতা শাহ (৩৬) কখনও শেয়ারবাজারের পথে পা বাড়াননি।
তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। মহামারি আমাকে আর্থিক বিষয়ে ভাবার সময় দেয়। এ নিয়ে গবেষণা, পড়াশোনা ও ফলোআপের সময় পাই আমি।’
ভারতের আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান জিরোধার সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিখিল কামাথ বলেন, ‘লকডাউনে শেয়ারবাজারে নতুন নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।’
কামাথ বলেন, ফিক্সড ডিপোজিট ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিরাপদ হলেও লোকজনের কাছে এসব কম আকর্ষণীয় হয়ে পড়ছিল। তারা শেয়ারবাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হন। কারণ বড় পুঁজির কোম্পানিগুলো প্রচুর ছাড় দেয়া মূল্যে শেয়ার ছাড়ায় মানুষের দৃষ্টি পুঁজিবাজারের দিকে যায়।
তিনি জানান, চলতি বছরের শুরুতে ভারতে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর ১৫ লাখেরও বেশি গ্রাহক জিরোধার সঙ্গে যুক্ত হন। এদের মধ্যে দুই লাখ ৩৫ হাজারের মতো গ্রাহক নারী। এ সংখ্যাটা জিরোধার নারী বিনিয়োগকারীদের প্রায় অর্ধেক।
এ কর্মকর্তা জানান, নারী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুনদের গড় বয়স ৩৩ বছর।
আরেকটি স্টক ব্রোকিং প্রতিষ্ঠান ফায়ার্স সিকিউরিটিজ বিবিসিকে জানায়, সক্রিয় নারী ব্যবসায়ীর সংখ্যা করোনাকালে তিন গুণ বেড়েছে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার (এসইবিআই) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এপ্রিল ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারতে ৬৩ লাখ ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। গত বছরে একই সময়ের (২৭ লাখ) তুলনায় যা ছিল দ্বিগুণেরও বেশি।